০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৪৪ |
দরোজাটা খুলে টানা দুই মিনিট তব্দা দাঁড়িয়ে ছিল শেখর। তারপর স্বভাব সুলভ গিয়ে বসেছিল কোণার ইজি চেয়ারটাতে। দময়ন্তী তখনো দোর গোঁড়ায়। “বসতে বলবে না?”, “ওহ! হ্যাঁ, সরি! বসো”। দময়ন্তী মুখোমুখি চেয়ারটাতে বসেছিল। পরের মুহূর্তগুলো ভীষণ ঝাঁ ঝাঁ করা নিঃশব্দ। দময়ন্তীর চোখ দুটো খুব ধীরে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে গোটা ত্রিশেক এলিমেন্টস এর উপর আলতো পরশ বুলিয়ে থামল শেখরের মুখে। চশমার কি পাওয়ার বেড়েছে? কত? ২.৫ কি? ২.৫ এর পেছনে ভাবলেশহীন চোখ দুটোর ভাষা পড়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলো। আরো কিছুক্ষণ পর অস্বস্তি কাটাতেই বোধকরি শেখর চেয়ারসমেত কাছে সরে এলো। এখন দুজনের মধ্যিখানে ফুট দেড়েক। অভ্যেসবসে শেখরের চোখ বার দুয়েক দময়ন্তীর চোখ থেকে প্যান করে নাক,ঠোঁট,চিবুক হয়ে গলার নিচে এসে থেমে যাচ্ছিল। দময়ন্তী অভ্যেসবসে আঁচল টেনে দিচ্ছিল। “বিয়ে করেছ?”, অকস্মাৎ প্রশ্নে বিমূঢ় শেখর না-সূচক মাথা নেড়েছিল। দময়ন্তীর চোখ শেখরের বাম কানের লতিতে কি যেন খুঁটিয়ে দেখল। একটু নেমে ঘাড়ের কাছটাতে কি একটু লালচে দাগ! চোখ আবার এসে শেখরের ২.৫ এ স্থির হলো। “বিয়ে করেছ?”, আবারো একই প্রশ্ন। এবার মাথা নিচু শেখরের। ব্যালকনিতে বসা চড়ুইটা ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। শরীরটা অদ্ভুতভাবে বাঁকা করে টিকটিকিটা ধীরে ধীরে বাদলা পোকাটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেওয়াল ঘড়ির কাঁটাটা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। একচুল নড়ছে না। চেয়ারের হাতলে দময়ন্তীর ডান হাতের কড়ে আঙ্গুলটা একটু কেঁপে উঠল। ঠোঁটটা একটুখানি ফাঁক হয়ে আবার যুথবদ্ধ। চোখের পলক শেষবার কখন পড়েছিল মনে নেই। প্রচন্ড ইচ্ছাতেও পাথর হয়ে যাওয়া পা-দুটো তুলতে পারছে না দময়ন্তী। স্ক্রু দিয়ে যেন মেঝেতে সাঁটা। শেষ পর্যন্ত ভালবাসা,করুণা,ঘৃণা তিন শত্রুর প্রচন্ড যুদ্ধে বীরদর্পে জয়ী হলো ঘৃণা। দময়ন্তী এবার বহুকষ্টে উঠে দাঁড়াতে পারল। প্রচন্ড ভারী পা-দুটো ওকে দরোজাঅব্দি টেনে নিয়ে গেল। দময়ন্তী দরোজাটা খুলতেও পেরেছিল……………….
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ঊনগল্প ;
প্রকাশ করা হয়েছে: এন্টি গল্প বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১০ রাত ২:২৬ |
লেখক বলেছেন:
একটু ভাবনা যা রয়ে গেল তা তোমার মত করে মেলাও…..
কি হতে পারে? স্টপ ? না গন ? ছবিটার নামটাও সুন্দর……”রিমেম্বার” !
নিহন বলেছেন:



বিপুল জটিল ক্যামনে ? বিপুল “ঊন” কমন পড়ছে না ?হ্যাপি নিউ ইয়ার

অনুগল্প:
————————————————————————–
বনবাড়ি
————————————————————————–শেখর ভাইয়া বাঁশবনে গিয়েছিলেন। তাই কঞ্চির আঘাতে দাগটা হয়েছে,
এই যা। আমরাও বাঁশবনে যাই, আমরা বাঁশবন ভালোবেসে। কারণ বাঁশের কঞ্চিতে যে মুরলি হয়, তাতে পাই নয়টি ফুটো। একটা ফুটোতে ঠোঁট চেপে ফুঁ দিলেই সুর উঠে।
আমরা বাঁশবনে যেতে ভালোবাসি। সুতরাং দময়ন্তী কেনো যাবে না নলখাড়গার বনে? ওখানে তো শুনেছি নলরাজার বাস; তিনি নল থেকে ভালো বাঁশি বানান।
আমরা বাঁশবন ভালোবাসি।
লেখক বলেছেন:
আপনার ইনস্ট্যান্ট পোস্টে যা বলে এসেছিলাম এখানেও তাই বললাম না, কারণ……..
বলুন তো কি ?
এন এইচ আর বলেছেন: শেষ পর্যন্ত ভালবাসা,করুণা,ঘৃণা তিন শত্রুর প্রচন্ড যুদ্ধে বীরদর্পে জয়ী হলো ঘৃণা।
এটাই কি সত্য ???????????????????????????
এটাই কি বাস্তবতা????????????????????””””’
জীবন দিয়ে পরখ করে দেখতে যেও না ভাইটু ! কষ্ট আর কষ্ট ! তবে, এটাই বাস্তবতা।

নববর্ষের শুভেচ্ছা।

নববর্ষের শুভেচ্ছা।
কথেবিডি বলেছেন: চোখ থেকে প্যান করে নাক,ঠোঁট,চিবুক হয়ে গলার নিচে এসে থেমে যাচ্ছিল। দময়ন্তী……………………………………………………………………………………………… ২.৫ এ স্থির হলো।”
আমার কাছে নতুন .. মনে ধরেছে!
হ্যাপি নিউ ইয়ার, ২০০৯
কথেবিডি টিম।
আপনাদের এই “কথেবিডি টিম” এর বিষয়ে যদি কিছু বলতেন… শুভ নববর্ষ।


নাহ, আরো ছোট করার প্ল্যান ছিল। একটু বড় হয়ে গেল। মাঝপথে নয়, হারালেন বোধকরি শেষে এসে দরোজার কাছটিতে।শুভ নববর্ষ।

দেখা হবে মাঠে, কমরেড
সেই জানোয়ারদের বিচার চেয়ে জ্বলে উঠতে উঠতে উঠতে উঠতে…শুভ নববর্ষ, কবি।
হ্যাঁ, নিশ্চই দেখা হবে। মাঠের মানুষ কতকাল ঘরে বসে থাকবে? বারুদে যার নেশা ধরে তার কাছে গোলাপের সুবাস বিষময় কমরেড। বিষময়।

লেখক বলেছেন: না, কোন প্রত্যুত্তর পাইনি। বরং আর এক সমস্যা বেধেছে। আমার নামে আর একটি ব্লগ ওপেন হয়ে গেছে !
ফিড ব্যাকে তিন বার অভিযোগ করেছি। কোন কিছুই তো হলো না। আপনি আজ একটু আগে যেটা পাঠিয়েছেন সেটা ট্রাই করেও সেই একই অবস্থা!
আসলেই কি এমন হয় ?
দময়ন্তী কি ভাল করে জানে নিজেকে… কিন্তু সে যেন তার ঘৃণাটা যত্ন করে রাখতে পারে…
দরোজাটা আসলে অনেক কিছুরই বিভাজন রেখা। ওপারে পেরুলেই হয় সব শেষ, নয়ত সব কিছু নতুন করে শুরু। মানুষ কেবলমাত্র ওই বিভাজন রেখা অব্দি গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তার পরের কিছুই আর তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সে তখন কোন শক্তির কাছে পরাজিত হবে বা জয়ী হবে তার নিয়ন্ত্রকও সে নয়। এই ভাঙ্গা-গড়ার খেলা চলেছে অবিশ্রান্ত! চলেছেই…..

“”বদলে যায় বলেই তো পৃথিবী আজও চিরন্তণ।
জানি না কি হবে?যেদিন বদল হবে রুদ্ধ…..আহা দময়ন্তী! যদি তুমি জানতে
যে গৃহে তোমার প্রবেশ হয়েছিল
ভালবাসা, করুণা, ঘৃণা জানার অভিবাসনায়
হয়তো জানলেও
অথচ ততক্ষণে দরজার ওপাশে কতশত বদল
সাহস হবে তো ফিরে যেতে!!!
দরজার ওপাশে কেই-ই বা পৌছতে পারে কখন?””
ঊন গল্প (অনুগল্পও কি?) এর ভক্ত পাঠককে মুগ্ধ করতে পেরেছেন।
যদিও কোন লেখকেরই দায়িত্ব তা নয়।
যদি কখনও পাঠক মুগ্ধ হয়েই যায়………
লেখকও আত্মপ্রসাদের স্বাদ আস্বাদন করেন নিশ্চয়ই!
লেখক বলেছেন:
আপনি কি ব্লগ ছেড়ে দিলেন?!
মনজুরুল হক বলেছেন:
না। লেখক আত্মপ্রসাদের স্বাদ আস্বাদন করে না।করেনি। করবেও না।
লেখকের চেষ্টা বরং আত্মপ্রসাদের মায়া থেকে নিজে বেরুনো,পাঠককেও বার করা।
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অভিনন্দন। “দরোজার ওপাশে” পৌঁছুতে পারার চেষ্টা
নারীরই থাকা উচিৎ। তবেই সে নারী তার স্বাধীনতার স্বাদ পেতে পারে এই পুরুষের বাই ডিফল্ট ‘এরিনা’ থেকে।

যাইহোক, “দময়ন্তী দরোজাটা খুলতেও পেরেছিল…” খূলতে না পারার জন্য তেমন কোন দ্বন্দ্বের অবকাশ গল্পে পাওয়া যায়নি, লাল দাগই একমাত্র কারণ হয়ে উঠল শেষ পর্যন্ত…..অবশ্য খুব সামান্য এই দাগই অসামান্য কারণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল…….
লেখক বলেছেন:
নাহ, এটা সেই নল-দময়ন্তী নয়। এই সব ছোট ছোট চিহ্ন আর ছোট ছোট অনুভূতির মিশেলই বোধকরি আমাদের ভাবনাকে তাড়িত করে!
যাহোক আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এত পুরোনো লেখা খুঁজে বার করেছেন! একটু অবাকই হলাম। ভাল থাকুন।



১. ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৪৯