০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০৮ |
দিল্লির সম্রাট আলাউদ্দীন রাজপুতানার চিতোর আক্রমণ করেন ও ছয় মাস কাল অবরোধের পর অধিকার করেন। নগর রক্ষার্থে রাজপুতগণ প্রাণপণে যুদ্ধ করে নিহত হন। দুর্গের অভ্যন্তরে রানী পদ্মিনীর সঙ্গে তেরো হাজার রাজপুত রমণী ‘জহরব্রতের’ অনুষ্ঠান করে প্রাণ বিসর্জন করেন। সময়কাল ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দ।
‘অপারেশন ডে-ব্রেক’ গল্পের প্রধান দুই চরিত্র দুটি কিশোর হানাদার জার্মান বাহিনী দ্বারা ঘেরাও হয়ে মাটির তলে গুপ্ত কুঠিতে আশ্রয় নেয়। ওই দুই পোলিশ কিশোরকে জার্মান সেনাধ্যক্ষ প্রাণে বাঁচার জন্য উঠে আসার সুযোগ দেয়। ওরা ওঠে না। একসময় কটিতে পানি ঢেলে পূর্ণ করে দেওয়া হয়। মুখ-নাক-চোখ পর্যন্ত পানি উঠে যেতে দুই ভাই একে অপরকে গুলি করে আত্মহত্যা করে। তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোর প্রাণের চেয়ে স্বাধীনতা বড়ো জেনেছিল। সময়কাল ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ।
জেরেমি এবাইদ। মিশরীয় ইহুদি। কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়াতে একাধিক ব্যবসা তার। কায়রোর অভিজাত পলীতে বসবাস। অভিজাত মহলে ওঠা-বসা মিশরের নেতা জেনারেল নাগিব শর্ত দেন, এবাইদ ইসরাইলে যেতে পারবে, তবে তার সকল সহায়সম্পত্তি মিশরে রেখে যেতে হবে। এবাইদ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি; স্থাবর-অস্থাবর সব ফেলে একবস্ত্রে জেরুজালেমে পা রাখেন। সময়কাল ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ।
ইতিহাসের এই তিনটি কাহিনীতে পরতে পরতে দেশপ্রেমের জয়গান। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে প্রতিটি ক্ষেত্রে জীবনের চেয়ে, সম্পদের চেয়ে, আরাম-আয়েশের চেয়ে দেশপ্রেম, স্বাধীনতা, স্বদেশভূমি অনেক বড়ো। অনেক মহান। এই তিনটি ঘটনার পরে শতাব্দী শেষে আমরা দেখি, ভারতের অজস্র মিশ্র জাতির সম্মিলনে রাজপুত সবার ওপরে। অন্যান্য জাতির কাছে রাজপুতদের পরিচয় বীরের জাতি। হিটলারের ন্যাৎসি বাহিনী পুরো ইউরোপ প্রায় দখল করেছিল। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাঁক করেছিল লাখ লাখ মানুষকে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমন নির্যাতন চলেছিল পোলিশদের ওপর। বিশেষ করে পোলিশ ইহুদিদের ওপর। পোলিশদের চরম আত্মত্যাগের কারণেই আজো পুরো ইউরোপে পোলিশরা স্বাধীনচেতা অনমনীয় জাতি। বীরের জাতি।
শত-সহস্র বছর ধরে ইহুদিরা ভূমিহীন। পথে পথে, তাঁবুতে তাঁবুতে ঘুরে বেড়িয়েছে। একখণ্ড জমি। একটা দেশ। একটা পা রাখার মাটি কী তা তাদের চেয়ে আর কে ভালো বোঝে? খ্রিস্টান, মুসলমান দ্বারা শত শত বছর ধরে নিপীড়িত হয়েছে তারা। একখণ্ড জমির জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপেক্ষা করেছে। আজ যেমন করছে ফিলিস্তিনিরা। আজ যেমন ফিলিস্তিনিরা নিজের দেশ থাকার পরও উদ্বাস্তু। ইহূদি-খ্রীষ্টান দ্বারা নির্যাতিত।
ইহুদিরা যেদিন ভূমি পেয়েছে তার পর থেকে আর ভুল করেনি একটিও। আশ্রয় দেয়নি কোনো রাজাকারকে, কোনো আলবদরকে, কোনো দালালকে, কোনো কোলাবরেটরকে, কোনো চামচাকে, কোনো দোদুল্যমানকে, কোনো সন্দেহগ্রস্তকে, কোনো ঘাপটি মারা সাধুবেশি হন্তারককে, কোনো জ্ঞানপাপী পুরোনোপন্থীকে। তাই তারা আজ ছড়ি ঘোরাচ্ছে পুরো আরব বিশ্বের মাথার ওপর। ওরা কখনো মাথায় বসায়নি কোনো স্বাধীনতাপন্থী-মুক্তিযুদ্ধপন্থী ভেকধারী কোলাবরেটরদের। এক মুহূর্তের জন্যও না। বংশপরম্পরার শত্রুকে ছাড় দেয়নি। চলিশ বছর আগে এবং এখনো যে স্কুল শিক্ষয়িত্রী বিকাল চারটে অব্দি পড়াচ্ছেন, তিনিই ছটা থেকে রাত বারোটা অব্দি ন্যাশনাল গার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সড়ক সাজায় ফার্ন, ইউক্যালিপটাস, পাম দিয়ে। ওরা সাজায় আপেল-কমলা লেবু গাছ দিয়ে। কেননা ওরা ভূমি-স্বদেশ-স্বাধীনতা-আত্মমর্যাদা-পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের মহিমা বোঝে। ঋণ বোঝে। আমরা বুঝি না। আমরা বুঝিনি।
ওই তিনটি উদ্ধৃত ঘটনার মতো অনেক হৃদয়গ্রাহী ঘটনাবলি ঘটে গেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে। লাখ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগে সিক্ত হয়েছে এই মাটি। হাজারো অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত লাল পেড়ে শাড়ির মতো মেলে আছে এই বাঙলার ঘাসে। কিন্তু এসব তো কাব্যের মতো। আবেগের কথা। রূঢ় বাস্তব কী? আমরা অকপটে আমাদের স্বাধীনতা-স্বদেশভূমি-দেশ মাত্রিকাকে তুলে দিয়েছি ধর্ষকের হাতে। হন্তারকের হাতে। আমরা মৌসুমি স্মৃতিচারণবাদী। বছরে দুবার দুচার দিনের জন্য ঘটা করে তাদের স্মরণ করি। এনার্কিস্টের মতো হতাশা ব্যক্ত করি। ক্ষোভ প্রকাশ করি। শেষে বেলাজ-বেহায়ার মতো ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত নিয়ে নির্লিপ্ত মামদোবাজি করি। বেজন্মা-জারজের মতো তাদের দেওয়া, রক্তস্নাত ভূমিতে স্বাধীনতাবিরোধী বেশ্যা জঠরে প্রতিনিয়ত স্বাধীনতাবিরোধী প্রজন্ম তৈরি করি। যাদের কাছে ৭১ সালটা হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র!
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা কী করেছি? গোটাকতক মনুমেন্ট (খুব বেশি মূর্তি গড়তে পারিনি ‘পাপ’ হবে বলে) সামান্য কটা টাকা ভাতা (মুখ চিনে চিনে), সরকারি চাকরিতে অসম্মানজনক কটা কোটা (রং চিনে চিনে), আর একটা সাদা হাতি- মন্ত্রণালয়। যাদের কাজ সার্টিফিকেট বিক্রি করা, নবায়ন করা আর রাজাকারের বাচ্চাদের টার্মিনেট করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানে রূপ দেওয়া। অবশ্য এসবের বিপরীতে অনেক কিছু করেও বা কী হতো? কারণ আমরা তো রাজাকারদের হাতেই দেশটা, ভূমিটা, স্বাধীনতাটা, আত্মমর্যাদাটা তুলে দিয়েছি। দেশমাতাকে ধর্ষিতা হতে ধর্ষকের হাতে তুলে দেওয়ার পর উপঢৌকন কী পেলাম না-পেলাম তা কী-ই বা এসে যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লিপিবদ্ধ ইতিহাস কলঙ্কিত-খণ্ডিত-ভগ্ন। আমাদের শহীদদের তালিকায় সন্দেহের কালো চাদর। আমাদের বীরদের কাতারে চাষাভূষা নেই। অধিকাংশই সেনা। যেন চাষারা যুদ্ধ করেনি। করলেও মরেনি। মরলেও ‘শহীদ’ হয়নি।
আমাদের খানাকতক মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র অসম্পূর্ণ। বাকোয়াজ। আমাদের সাহিত্যে-উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ ঘটনাভিত্তিক। বর্ণনামূলক। নিরাপদ অবস্থান থেকে দেখা। আমাদের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ খামখেয়ালি তামাশায় বাণীবদ্ধ। আমাদের সংগ্রহশালায় গোটাকতক বন্দুকের নল আর মর্টারের খোসা। আমাদের যুদ্ধকালীন রণহুঙ্কার যেন পরিত্যাজ্য। যেন অশ্লীল শব্দ, জনসম্মুখে বলা বারণ। যেন লজ্জাকর। জয়বাংলা যেন দলীয় আনুগত্য। আমাদের মননে কোনো মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন নেই। কৃতজ্ঞতা, দায়বদ্ধতা, ঋণ শোধ করার অন্তরের বাধ্যবাধকতা তো দূরের কথা। আমাদের বিজয়ের দিন যেন মেঘাচ্ছন্ন। স্বাধীনতা দিবস যেন ক্যালেন্ডারের ভুল তথ্য।
এই হচ্ছি আমরা। আবেগগ্রস্ত কবির ভাষায় ‘লড়াকু বাঙালি। অর্ধ শিক্ষিত মতলববাজ ফেরেপবাজদের ভাষায় ‘বীরের জাত বাঙালি’। যে জাতি তার মাতৃভূমি উপহার দেওয়া শহীদদের রক্তের ভাষা বোঝে না, যে জাতি তার স্বদেশ-স্বাধীনতার মর্ম বোঝে না, বীরদের বীরত্বকে ভূলুণ্ঠিত করে ধর্ষিতা হতে দেয় আর বিজাতীয় পুলকে ধেই ধেই করে নাচে সে আবার বীর হয় কী করে? আমি বুঝি না।
স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার অধ্যুষিত জোট সরকারকে ঊনচলিশ-চলিশ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে।এবারও হয়ত তা-ই হবে। এই মানুষদের অনেকেই একসময় মুক্তিযোদ্ধা ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের অনুগামী ছিল। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এরা জেনেশুনেই সরাসরি রাজাকারি সমর্থন করেছে। জেনেশুনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। এখন দেশের সিভিল এবং মিলিটারি ব্যুরোক্র্যাসির প্রধান প্রধান পদগুলো শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করাদের দখলে। পাকিস্তানপন্থী কোলাবরেটরদের দখলে। এ জাতি এরশাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীর নয় বছরের শাসন মেনে নিয়েছে। পাকিস্তানপন্থাকে বরণডালায় বরণ করেছে। এ জাতির একাধিক মহামান্য বিচারপতি মুক্তিযুদ্ধকে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করার জন্য পয়দা হওয়া সেনা শাসনকে বৈধতা দিয়েছে। ক্রমে ক্রমে আমরা প্রায় পঞ্চান্ন-ষাট ভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করার কাতারে চলে গেছি। কী করে বলি তাই আমরা বীরের জাতি? আমরা আসলে জাতিগতভাবে দালাল। তামাশা উপভোগী দর্শক। আত্মবিস্তৃত অপগণ্ড। অকাট মুর্খ।
আমাদেরকে যদি রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, এল সালভাদরের মতো যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুদ্ধ করতে হতো, আমাদের প্রজন্মগুলো যদি ভয়াবহ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের আগুনে পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হতো, যদি আমাদের আত্মমর্যাদা শত শত বছর ধরে পদদলিত হতো এবং তা হলে আমরা বুঝতে শিখতাম। দাম দিতে পারতাম। দাম নিতে পারতাম। হতে পারতাম ওই রাজপুত আত্মহননকারী রমণীদের মতো, যারা বর্বর মুঘলদের বশ্যতা স্বীকারের চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় ভেবেছিল। হতে পারতাম ওই পোলিশ কিশোরের মতো, জাত্যাভিমানী। হতে পারতাম জেরেমি এবাইদের মতো, যে কোটি টাকার মায়া ভুলতে পারে একখণ্ড মাটির জন্য।
আমরা এখন কেবলই মানুষকে স্মৃতিটিতি ভুলে সামনে এগুনোর নসিয়ত করি।কেবলই সামনে এগুনোর জন্য পেছনের সকল গৌরব দুপায়ে ঠেলে সরিয়ে দেই।আমরা এখন হিপোক্র্যাসির চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে ষোলই ডিসেম্বর সাদা ফিনফিনে জামা-পাজামা,লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে সেলিব্রেটির মত নিজেকে উপস্থাপন করি…চলতে থাকে বেটাক্যাম….হ্যান্ডিক্যাম আর চ্যানেলে চ্যানেলে সুখের পায়রা ওড়ানোর বালখিল্য আদিক্ষেতা।পেছনে ওৎ পেতে থাকা বহুবর্ণের রাজাকাররা তাম্বুল রসে রঞ্জিত অধরে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে আরো একটি বিজয় দিবসের আগে আরো কিছু দালাল গড়ে তোলার ফন্দি করতে থাকে।
সব পাওয়া ইতিহাসবিস্মৃত মানুষ ক্ষণে ক্ষণে আগুয়ান হতে থাকে রংবেরং এর রাজাকারীর মোহনার দিকে।আর ঠিক সেই সময়ে লাখ লাখ নিহত যোদ্ধা চরম গ্লানির পরম ঘৃণায় পাশ ফিরে শোয়। শুয়েই থাকে।
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): পাশফিরে শোয়, শুয়েই থাকে। ;
প্রকাশ করা হয়েছে: মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১০ ভোর ৪:০৩ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর…
লেখক বলেছেন:
প্লাস নিলাম। ঈদও নাই! মুবারক তো নাই-ই!!
ভাল থাকবেন।

লেখক বলেছেন:
ধন্যবাদ।
লেখক বলেছেন:
চমৎকার একটি শব্দের মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বন্ধন বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ লেখাটির জন্য ।
সংক্ষেপে এইটুকু বলতে পারি যে, যে চেতনার জন্য লেখাটিতে ক্রোধ এবং হাহাকার ব্যক্ত হয়েছে তা যে নিশ্চিত অনির্মিত আজও এটা বোঝার একটা ব্যাপার আছে । আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে এই নির্মাণের জন্য যে সময়কাল মথিত হওয়ার কথা ছিল তা সর্বাংশে হয়নি । বিশেষতঃ ১৯৪৭(আগে পরে), ১৯৫২,১৯৭১–এই সময়খন্ড গুলোর একটা ধারাবাহিকতা । যে ধারায় নির্মিত হওয়ার কথা ছিল একটা বাঙালি ভাষাজাতির । বলার কথা ছিল ‘আমি আগে বাঙালি পরে মুসলমান বা হিন্দু বা বৌদ্ধ—। নতুবা এত প্রাণ উৎসর্গ কীসের জন্য ? জাতি,জাতিসত্বা,জাতীয়তাবাদ—এসবের মধ্যেও পর্যায়ক্রমিক নির্মাণ এবং পার্থক্যকে চিহ্নিত করা জরুরী ।
যাহোক আলোচনার দাবী রেখে সময়পোযোগী লেখাটির জন্য আবার ধন্যবাদ জানাই ।
লেখক বলেছেন:
আমি ঠিক জাতিস্বত্ত্বার এই গভীর বিষয়টা বর্তমান আলোচনায় আনতে চাইনি। যে কারণে ওই বিষয়টা সেভাবে আসেনি। পরের কোন লেখায় সেটা আলোচনার ইচ্ছা রইল। আশা করি সে সময় আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত পাব।
ধন্যবাদ।
মিছে মন্ডল বলেছেন: “কী করে বলি তাই আমরা বীরের জাতি? আমরা আসলে জাতিগতভাবে দালাল। তামাশা উপভোগী দর্শক। আত্মবিস্তৃত অপগণ্ড। অকাট মুর্খ।”
আসলের আমরা দালাল, সুবিধাবাদি,তামাশা উপভোগী দর্শক; নাহলে শুধু মাত্র ক্ষমতার লোভে পরে মুক্তিযোদ্ধা নামধারি কিছু মানুষ কিভাবে পারে জামাত-রাজাকারদের সাথে জোট বাঁধতে??? আর আমরা সাধারন জনগণও তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি!!!!
আমারা কোন দিনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবোনা যতদিন না আমরা আমদের এই নোংরা মনোভাবটা পরিবর্তন করবো।
বিবেককে নাড়া দেয়া এই লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঈদ মুবারাক ।
লেখক বলেছেন: বাঙালি ক্রোনলজি নিয়ে আলাদা লেখা লেখার আশা আছে। সেখানে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব কবে,কতদিন বাঙালি সত্যিকারে স্বশাসিত ছিল। আমাদের শেখানো হয়েছেঃ
দুশ’বছর আগে ব্রিটিশ দখলদারিত্বের আগে নাকি আমরা স্বাধীন ছিলাম। এখানেই আমাদের ইতিহাসের ‘ট্যুইস্ট’ শুরু হয়েছে! এবিষয়ে অন্য লেখায় আলোচনা হবে।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।




ধীবর বলেছেন: ইসরাইলের সাথে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কলংকিত করাটা ঠিক হয়নি। ইসরাইল নিয়ে লেখকের জ্ঞান সম্ভবত তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যম প্রসুত। কেননা ইসরাইল কোন রাস্ট্র নয়, বরং পৃথিবীতে সবচেয়ে কট্টরপন্থি মৌলবাদিদের আবাসস্থল মাত্র।
তবে লেখার বাকি অংশটুকু অত্যন্ত প্রাণস্পর্শি , এজন্য লেখক ধন্যবাদ অবশ্যই পেতে পারেন।
লেখক বলেছেন:
তাহলে তো ওয়ার্ল্ড ম্যাপে ইসরাইল থাকায় ম্যাপও কলঙ্কিত হয়ে গেছে ! হায় ! এখন উপায় ?


জ্বিনের বাদশা বলেছেন: “আমাদেরকে যদি রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, এল সালভাদরের মতো যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুদ্ধ করতে হতো ……. শত শত বছর ধরে পদদলিত হতো এবং তা হলে আমরা বুঝতে শিখতাম। দাম দিতে পারতাম। ”
এটাই মনে হয় মূল কারণ
আপাততঃ যেটা বুঝি, শুধু বক্তৃতা দিয়ে হবেনা … এটা যে দেশের জন্য একটা প্রবলেম সেটা দেশের মানুষের বুঝতে হবে … অনবরত অর্থনৈতিক দৈন্যতায় হিমশিম খাওয়া মানুষ সেটা বুঝবে বলে আমার মনে হয়না …
লেখক বলেছেন:
সাধারণ মানুষ আসলে তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে থাকে আগুয়ান কোন মহামানবের দিকে! তারা নিজেরা কিছুতেই শুরুটা করতে পারে না। যাদের ওপর ভরসা তাদের তারা নাকডুবিয়েছে ব্যক্তিস্বার্থের মহাসমুদ্রে!সেখান থেকে কে তাদের ফেরাবে ? কিন্তু একদিন বোধহয় সবাইকেই ফিরতে হয়। ফিরতে হবে।

মনজুরুল হক বলেছেন:
যুদ্ধ,স্বাধীনতা,গণতন্ত্র,অর্থনীতি সবই তো একই ব্যবস্থার অধীন। সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকলে বৈষম্য চরম রূপ নেয় না।কিছুটা ওয়েলফেয়ার স্টেটের মত দাঁড়ায়। আবার সত্যিকার গণতন্ত্র তখনই আসতে পারে-যদি দেশটি মতাদর্শীক,রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হয়।এবং এই স্বাধীন হওয়ার প্রথম সোপান জাতিগত ভাবে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা।মুক্তিযুদ্ধ জাতীয়যুদ্ধ ছিল,না উপনিবেশ বিরোধী যুদ্ধ ছিল,নাকি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ ছিল,সেটা অমীমাংশিত রেখে তো এগুনো যাবে না।

নিবিড় বলেছেন: পুরো লিখাটাতে আগের-আগের টার চাইতেও বেশি তেজ ,ধিক্কার আর খেদ লক্ষ্য করা গেছে।লিখার স্টাইল ,বর্ণনা আর বিন্যাস নিয়ে কমেন্ট করাটা নিজের অযোগ্যতা মনে করি।এটা একটা স্পিচ, আত্মজাগারনি ক্ষুর ধার বক্তৃ্তা …..কিন্তু আফসোস এই কথা শুনার মানুষ কই?
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি….
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে এটাতে সন্দেহ নেই। রাষ্ট্রগতভাবে একটা জাতি বীর আবার সে জাতিটাই নাকি সহনশীল জাতি হিসেবে সুপরিচিত ।এই সহনশীলতাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে ।যুগে যুগে সুযোগ সন্ধানীরা এর সুযোগ নিয়ে ফুলে ফেপে উঠেছে।তবে এর পিছনে স্বাধীনতা পক্ষ ও বিপক্ষ দুদলেরই সমান অংশীদারিত্ম আছে।এটা মাথায় রাখা উচিত যে আজকের যে অবস্হা সেটা একদিনে হয় নি।অনেক দিন ধরে ধরে হয়েছে।এটাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।
এই প্রশ্রয়ের ডাইমেনশন এক এক সময় এক এক রকম ছিল। ৭১-৭৫, ৭৫-৮১,৮১-৯০,৯০-আজ অবধি খালি এ প্রশ্রয় গুলো নতুন নতুন মাত্রা পেয়েছে।যেকারনে স্বাধীনতা একটা দলের জন্য ইতিহাসের অংশ থাকায় সাপোর্টিং সাইনবোর্ড, দল ভারী করার মূলা—- আর আর একটা দলের কাছে প্রত্যক্ষ মাইনাস পয়েন্ট ।এখানে লক্ষ্য রাখা বিবেচ্য যে দুদিকের আশ্রয়েই কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা আজকের এই অবস্হানে । তারা এক পাত্রে কাল ছিল আজ এক পাত্রে আর পরশু আরেক পাত্রে যাবে।
যে দেশে ধর্ম একটা প্রধান সেন্টিমেন্ট সেদেশে এটাকে পূজি করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।মনে রাখা দরকার আজকে রাজাকার রা যদি সরকার গঠন নাও করত কালকে অন্য একটা দল স্বার্থ রক্ষা কিংবা জোট রক্ষার্থে তাদের আপন করে নিত।
এত কথার শেষ কথা হল একটা স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীকে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ করা যাচ্চে না বা মনে হয় যাবেও না—–কারন এরা নিজেরাই নিজেদের ব্যলেন্স তৈরি করে নিয়েছে—এবং সে বয়লেন্সের জন্য দায়ী আমরাই —কেননা আমরাই সে সুযোগ করে দিয়েছি সময়ের প্রেক্ষাপটে।সমূলে নিমুর্লের অভীক্ষার জন্য দরকার আরও একটা বিপ্লব…………সে বিপ্লবের শুরু কোথায় ??
লেখক বলেছেন:
“একটা স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীকে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ করা যাচ্চে না বা মনে হয় যাবেও না—–কারন এরা নিজেরাই নিজেদের ব্যলেন্স তৈরি করে নিয়েছে—এবং সে বয়লেন্সের জন্য দায়ী আমরাই —কেননা আমরাই সে সুযোগ করে দিয়েছি সময়ের প্রেক্ষাপটে।সমূলে নিমুর্লের অভীক্ষার জন্য দরকার আরও একটা বিপ্লব…………সে বিপ্লবের শুরু কোথায় ??”
আপনার এই কথার সূত্র ধরেই বলা যাকঃ বিপ্লবের শুরুটা হয়ে গেছে আগেই। আমাদের অজান্তেই। এখন চলছে উত্থান পর্ব। এই পর্বটাকে নার্সিং করে পরের পর্বে নেওয়ার জন্য যে ডেডিকেশন সম্পন্ন দলীয় অন্তর্ভূক্তি দরকার তা এই মুহূর্তে নেই। কিন্ত কখনো হবে না,এমন না।
আমরা আসলে যাদের ওপর ডিপেন্ড করছি তারা শেষ। নিজেদেরকে তারা ফিনিশ করে দিয়েছে। আমরা এখন তাকাব নতুনের দিকে।তার আগে তাকাব সেই নতুনকে যারা এই সব মহৎ কাজ থেকে দূরে রাখার জন্য সেলেবল কমোডিটিজ বানিয়ে গ্লোবালাইজেশনের চোরাগলিতে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে, তাদের প্রতিরোধ করার দিকে। আমাদের জেনারেশনকে বাঁচাতে পারলে জেনারেশনই আমাদের সেই কাঙ্খিত বন্দরে পৌঁছে দেবে। আমি ভিষণ আশাবাদী।
আপনার এই মন্তব্য প্রসঙ্গে আপনার পোস্টে বলেছি বলে দোহরালাম না।
ভাল থাকবেন।


চলছে….সারা দেশে কত কিছুই তো চলছে, আমরা খোঁজ রাখি কয়টির। আবার, সারা দেশে তো কত কিছুই থেমে আছে, আমরা সব কি দেখতে পাই !!
মোরশেদ পারভেজ বলেছেন: রাজাকার অধ্যূষিত জোট সরকার কে ত্যাগ করলাম।
পরবর্তী সরকার যা করছে… প্বার্শবর্তী দেশের প্রদেশ হলেও এর চেয়ে কম খারাপ হত… বড় দূ:খখে বলছি।
নমস্কার, আপনার কাছে বাঙালি ব্রাহ্মণদের ব্যাপারে মতামত জানতে চাই, আশা রাখলাম. লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো. দারুণ লাগলো.
দারুণ লাগলো. আমিও একজন ব্রাহ্মণ, আমিও জানতে চাই। আপনার কাছে অনেক আশা রাখছি
আপনাকেও ধন্যবাদ।
নমস্কার। এখানে ‘বাঙালি বাহ্মণ’ প্রসঙ্গটা কিভাবে আসল বুঝতে পারছি না। লেখা পড়া জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।