“মিরপুরের রূপনগর এলাকার একটি বস্তিতে আগুন লেগেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার পর এ আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। আগুনে এর মধ্যেই পুড়ে গেছে কয়েক শ বাসা-বাড়ি। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির বাসিন্দারা রাস্তায় বসে আহাজারি করছেন….”
খবরগুলো এভাবেই ছাপা হয়। এভাবেই প্রতি বছর নিয়ম করে আগুন লাগে। তবে এই ভানুমতির খেল এখন আর গোপনে লুকিয়ে ছাপিয়ে খেলতে হয় না। খুল্লাম খুল্লাই খেলা যায়।
বস্তিগুলো সরকারী জায়গায় গড়ে ওঠে। ভুল হল। গড়ে তোলা হয়। সরকারী দলের স্থানীয় নেতারা সরকারী জায়গা দখল করে সেই দখলি স্বত্ত কায়েমের জন্য বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেয় আর মসজিদ বানায়। এই সব বস্তির সবকিছুই অবৈধ। এখানকার বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সবই অবৈধ। আর এসব অবৈধ কারবার থেকে মাসে মাসে কোটি টাকা আসে। সেই টাকার হিস্যা চলে যায় অনেক শীর্ষমহল পর্যন্ত।
এই অবৈধ বাণিজ্যের মালিকানা বদলের প্রয়োজন হলে তখন বস্তিতে আগুন লাগে। মানে, লাগানো হয়। যারা লাগায় তাদের দিলে-ক্বলবে একটু রহম টহম থাকলে তারা সন্ধ্যেরাতে বা দিনে আগুন দেয়, যাতে করে ক্যাজ্যুয়ালিটি কম থাকে। তারাও তো মানুষ! বলুন? আর একটু ফেরোশাস টাইপ হলে মাঝ রাতে আগুন দেয়। তারা মৃতের সংখ্যা নিয়ে ন্যাকার মত ভাবে না।
তো গপ্প এখানেই শেষ নয়। এ তো গেল বস্তি পোড়ানোর রাজনৈতিক কালচারের একটি দিক। এবার দেখুন সরকারীভাবে সরাসরি কিভাবে বস্তি দখল করার হয়?
ধরুন মন্ত্রণালয় থেকে বস্তিবাসীকে বস্তি ছাড়ার জন্য নোটিস করা হলো। কিভাবে? নোটিস নিয়ে এক হারামজাদা ইতর গিয়ে একটা হোটেলে বসে চা-নাশতা গিলবে। কয়েকটা লেবড়ু মাস্তানকে ডেকে বলবে- ‘নুটিশ’ আছে। মাস্তানরা ‘নুটিশ’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে শলা পরামর্শ করবে। এভাবে ৩ বার ‘নুটিশ’ দেওয়া হবে, যার কোনো খবর বস্তিবাসী জানবে না। এরপর এক গর্বিত হ্যাডমায়ীত পুলকিত বিসিএস ক্যাডার ম্যাজিস্ট্রেট কোনো এক প্রত্যুষে কিংবা সন্ধ্যাবেলায় বুলডোজার নিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করতে বেরুবেন। আর সেটা অতি অবশ্যই বৃহস্পতিবারে হবে! কেন? কারণ বস্তিবাসী যেন আদালতের সাহায্য না নিতে পারে, যেন সরকারের কোনো ট্রাস্টের দ্বারস্থ না হতে পারে, যেন কোনো সরকারী দপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে পারে!
বিসিএস-এ বা সাভার পিএটিসি-তে বুনিয়াদী কোর্সে এই সব মেঠো শয়তানী বুদ্ধি শেখানো হয় না। এসব ডিপার্টমেন্ট থেকে পরম্পরায় এরা শেখে। কত নিষ্ঠুরভাবে জনগণের চামড়া তোলা যায়! যে যত ভালো শেখে তার তত দ্রুত ত্বরিক্কি বাড়ে। বিদেশ ট্যুর বাড়ে।
কিন্তু বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় হলো, এই যে নির্মম অত্যাচার, নৃশংস অত্যচারা, উচ্ছেদ-অবিচার, আগুনে পুড়িয়ে মারা, সারাজীবনের অর্জিত সামান্য সম্পদ জ্বালিয়ে তাদেরকে নিঃস্ব করা, নিরুপায় করে দেয়া, আইনের সহায়তা না নিতে দেওয়া…. এসব কিন্তু কোনো বিদেশী শাসকের পেয়াদারা করছে না! করছে কালকেই শাহবাগে বিপ্লব, জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতা মারানো একদল হারামির বাচ্চা। এবং ভিকটিম তথা ভুক্তভুগীরা নির্বিকার প্রতিবাদহীন! শুধু উপরের দিকে তাকিয়ে অদৃশ্য একজনের কাছে বিচার দেয়!
এই অত্যাচার-অবিচার নিয়ে বামপন্থীদেরও কোনো কর্মসূচি নেই। কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানিয়ে থাকেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ঘেরাও হয় না। মাস্তান অবরুদ্ধ হয় না। পুলিশ দৌড়ে পালায় না। সরকার সাবধান হয় না।
টিআরপি। কাটতি। ক্লিক। জুম। ফটোসেশন। নিউজ। ফলোআপ। গোল্ডফিস। ফেডআউট! ফেডআউট!!