#Chronicles_of_Russia_Ukraine_war_64

📌 ককেশোফোবিয়া > কমিউনিস্টোফোবিয়া > রুশোফোবিয়া: পার্ট—ওয়ান।

রুশোফোবিয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার মিলিটারি অপারেশন থেকে শুরু হয়নি। এটি পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের

নিরলস পরিশ্রমের ফসল। মস্কোর কিয়েভে অপারেশন শুরুর পর যা জোরেশোরে সামনে এসেছে মাত্র। এর ইতিহাস অনেক পুরোনো।

.

📌 ১৯৩৯ এর পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে হিটলার। জার্মানীর বিশ্ব জয়ের অভিযান যত অগ্রসর হতে থাকে ততই সোভিয়েতরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে থাকে। সেই সাথে জার্মানীর ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতাও তাদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষৎ আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অনেক টানাপোড়েনের পরে ১৯৩৯ সালে রাশিয়া—জার্মানি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলো। তারপরও চূড়ান্ত মুহূর্তে সেই চুক্তি টেকেনি। ১৯৪১ সালর ২২ জুন হিটলার ‘অপারেশন বারবারোসা’ ডিক্লেয়ার করে সোভিয়েত ইউনিয়নে অভিযান শুরু করে। অভিযানে উনিশটি প্যানযার ডিভিশন, ৩ হাজার ট্যাংক, ২৫০০ বিমান এবং ৭০০০ কামান অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর ছিল ত্রিশ লক্ষ সৈন্য, সাথে ৬ লক্ষ মোটরযান এবং ৬-৭ লক্ষ ঘোড়সওয়ার ব্যাটালিয়ন। এসব পুরোনো কথা।

.

📌 ১৯৪৫ সালের ৮ মে জার্মান ফিল্ড মার্শাল উইলহেম কাইটেল, জার্মান সামরিক বাহিনীর প্রধান জার্মানির কার্লসহোর্স্ট-এ সোভিয়েত রেড আর্মির মার্শাল গ্রেগরি জুকভের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। এরও আগে জার্মান বাহিনী ৪ই মে তারিখে ল্যুনবার্গ-এ ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল মন্ট্গমারির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। সেটা জোসেফ স্তালিন মানেননি। তাই ৪ দিন পরে জার্মানিকে আবার স্তালিনের নির্দেশে মার্শাল জুকভ-এর কাছে আত্মসমর্পন করতে হয়। এই ব্যাপারটা সে সময় উইনস্টন চার্চিল ফ্রাঙ্ক-ডি-রুজভেল্ট মানতে পারেননি। তাদের অহমে ঘা লেগেছিল। তারা তখন বিশ্বের প্রধান দুটি ‘কুলিন’ দেশ। তাদের কাছে আত্মসমর্পন স্তালিন মানতে বাধ্য। অথচ স্তালিন মানেননি। রেড আর্মি আগের এক সপ্তাহ ধরে বার্লিন আর কার্লহোস্টকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল। যে কারণে ৮ তারিখের সারেন্ডার। এটাকেই চার্চিল ও রুজভেল্ট নিজেদের অপমান তথা পরাজয় ভেবে নিয়েছিল। সেই যে শুরু হলো পশ্চিমা অন্তর্জালা।

এর পর তারা সারা বিশ্বকে দেখাতে চাইল ‘মিত্র বাহিনী’ জয়ী হয়েছে। অথচ বিশ্ব দেখল প্রবল পরাক্রমশালী হিটলারের নাৎসি বাহিনী সোভিয়েত রেড আর্মির কাছে পরাজিত এবং আত্মসমর্পন করেছে। এরপর থেকেই ইউএস এবং ইউকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এন্টি-সোভিয়েত প্রপাগান্ডার পেছনে। তার অন্যতম স্তালিনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ঘৃণ্য বিষোদগার। শুরু হলো—‘ককেশোফোবিয়া’। সে সব অভিযোগ এতটাই নির্জলা মিথ্যা আর বিদ্বেষপূর্ণ যে প্রায় ৭০ বছর পরে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা CIA তাদের ‘গোপন ডকুমেন্টস রিলিজ’ এর মাধ্যমে স্বীকার করেছে-তারা যুগ যুগ ধরে স্তালিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ প্রচার করে এসেছে। এ নিয়ে বলতে শুরু করলে ফুরোবে না। সংক্ষেপ করা যাক:

.

📌 সোভিয়েত সুপ্রিম লিডার জোসেফ স্তালিনের উপর তাদের এত ঘৃণা-বিদ্বেষ কেন? কোথাও তার উত্তর লিখিত নেই। অনুমান করা যায় স্তালিন ছিলেন সোভিয়েতের এক ক্ষুদ্র অঞ্চল জর্জিয়ার সাধারণ পরিবারের সন্তান। তাঁর তথাকথিত কোনো ‘কুলিন’ ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো না। যদিও হাজার হাজার পশ্চিমা বই-পত্রে তাঁকে বলা হতো—‘মুচির সন্তান’! স্তালিনের বাবার একটি জুতো তৈরির কারখানা ছিল। সেটাকেই পশ্চিমা স্নব, তথাকথিত উচ্চ বংশের এলিটরা ‘মুচি’ বলে ভৎর্সনা করত। সেই স্তালিন তাদের মত ক্যামব্রিজ-অক্সফোর্ডের শিক্ষিত নন। তাদের মত বনেদি নন। তাদের মত সম্পদশালী দেশের প্রেসিডেন্ট নন। একজন সাধারণ ককেশিয়ান, যে কীনা ইউরোপীয়ান নয়! আর সেই স্তালিন কীনা এখন বিশ্ব নেতা? তাঁর হাতেই হিটলারের পরাজয় তথা বিশ্বকে নাৎসি বর্বরতা থেকে মুক্ত করার বিজয়মাল্য! স্তালিনের হাত ধরে পশ্চাদপদ সোভিয়েত মাত্র ৫ বছরে বিশ্বের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ দেশ হয়ে উঠল। এ কী করে মেনে নেয়া যায়? শুরু হলো—‘কমিউনিস্টোফোবিয়া’। সেই থেকে তাদের জ্বলুনি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে….। স্তালিনের শাসনকালের পুরোটা সময়জুড়ে ইউএস ও ইউকে তাদের বাজেটের বিশেষ একটা অংশ বরাদ্দ করেছিল স্তালিনকে ‘খুনি’, ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘একনায়ক’ প্রমাণ করতে। তারই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পরও।

.

📌 সোভিয়েত ভেঙে ১৪ টি দেশ রাতারাতি স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর রাশিয়া একা হয়ে যায় (এই অধ্যায় আরও ব্যাপ্ত। সে ইতিহাসও থাকুক)।এখন যখন স্তালিন নেই, সোভিয়েত নেই, সোভিয়েত-ভাঙা বিশ্বাসঘাতক মিখাইল গর্বচেভ আর তার উত্তরসূরি মাতাল, অথর্ব, অযোগ্য ইয়েলেৎসিন ক্ষমতায়, তখন তাদের মুড অব এ্যাটাক চেঞ্জ হয়ে হয়ে গেল—‘রুশোফোবিয়া’। যে রুশোফোবিয়া এখন ইউক্রেনে এসে লালিত-পালিত হয়ে নতুন করে নিও-নাৎসিদের হাত ধরে ফুলে-ফেঁপে উঠল। যে রুশোফোবিয়া ছড়িয়ে পড়ল গোটা ইউরোপে এবং আটলান্টিক পার হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। Robert Bridge নামের এক মার্কিন লেখক-সাংবাদিকের বিখ্যাত বই—‘Midnight in the American Empire’ এ দেখিয়েছেন কীভাবে লুটেরা কর্পোরেশন এবং তাদের পলিটিক্যাল চাকর-বাকররা আমেরিকার স্বপ্নকে ধ্বংস করছে।

‘রুশোফোবিয়া’ প্রচারে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-হলিউড। তাদের কথা বলার আগে বিখ্যাত ইয়ান ফ্লেমিঙের ‘জেমস বণ্ড’-এর কথা বলা যাক। জেমস বণ্ডকে চেনেন না এমন কেউ নেই আধুনিক বিশ্বে। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এসপিওনাজ থ্রিলার বা স্পাই সিরিজ। জেমস বণ্ডের চিত্রায়ীত হওয়া ২৪টি মুভির অন্তত ৮টি মুভিতে দেখানো হয়েছে বণ্ড সোভিয়েতের ভযঙ্কর সব এক্সপেরিমেন্ট, আক্রমণের প্ল্যান ধংস করেছে। কয়েকটি বইয়ের ভিলেন রাশিয়ান। এভাবে ব্রিটিশ মুভি, সাহিত্য, কবিতা, গল্প-উপন্যাস, কমিকস, কার্টুন আর হাজার হাজার ডকুমেন্টারির বিষয়বস্তু এন্টি-সোভিয়েত বা এন্টি-রাশিয়া, অর্থাৎ রুশোফোবিয়া।

.

📌 হলিউডের এক সময়কার ক্রেজ সিলভেস্টার স্ট্যালোনের কথা মনে আছে? স্ট্যালোনের ছবি- “রকি IV” যেটা মুক্তি পায় ১৯৮৫ সালে। এই মুভির পুরোটা জুড়ে ছিলো ইউক্রেনে মস্কোর কর্মকাণ্ড। রাশিয়াকে হিটলারের নাৎসিদের চেয়েও ঘৃণিত রূপায়ণ করে রাশিয়ান জনগণের প্রতি তীব্র বিষোদগার করা হয়েছে। ইউক্রেনের শাসকদের এবং জনগণের একাংশের ভেতরে থাকা সুপ্ত নয়া বর্ণবাদকে উসকে দিয়েছে। হলিউড এবং তাদের মিডয়া টাইকুনরা দীর্ঘকাল ধরেই একাজ করে এসেছে।আফগানিস্তানে রাশিয়ার অবস্থান এবং যুদ্ধ নিয়ে স্ট্যালনকে দিয়ে বানানো হয়েছিল ‘র্যা ম্বো-১’ ‘র্যা ম্বো-২’ এরকম ডজন ডজন সিনেমায় হলিউড খুব সচেতনভাবে সাধারণ রাশিয়ান নাগরিকদের বিরুদ্ধে কুৎসিত প্রপাগাণ্ডা প্রচার করে আসছে।এরই প্রতিক্রিয়ায় বিখ্যাত কন্ডাক্টর ভ্যালেরি গারগিয়েভ মিউনিখ ফিলহারমোনিক-এ তার চাকরি হারানো থেকে শুরু করে, শিশুদের স্কুলে নির্যাতনের শিকার হওয়া, রাশান পরিবারগুলো ক্যাফে এবং রেস্তোঁরাগুলোতে প্রবেশাধিকার না পাওয়া, এমনকি চিকিৎসা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।

.

📌 ‘Resident Evil’ সিরিজের ৬টি সিনেমার কথাও অনেকের মনে থাকার কথা। অ্যাকশন হরর এই ফিল্ম সিরিজটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে। এই মুভির প্রধান চরিত্র ১৯৭৫ সালে জন্ম নেয়া মিলা জোভোভিচ জন্মসূত্রে ইউক্রেনিয়ান তথা রাশিয়ান। বর্তমানে আমেরিকার নাগরিক। এই সিরিজের ৩টিতেই ভিলেন রাশান। T-Virus এর জন্ম দেয়া Umbrella Corporation-এর রাশান ভিলেন বিশ্বকে ভাইরাসাক্রান্ত করে ধ্বংস করতে চায়। এই ‘Resident Evil’-এর মত আরও ডজন ডজন মুভি তৈরি হয়েছে ওই এন্টি-রাশান ঘৃণা ছড়াতে। অর্থাৎ এখানেও সেই রুশোফোবিয়া। আমেরিকায়ও ব্রিটেনের মত মুভি, সাহিত্য, কবিতা, গল্প-উপন্যাস, কমিকস, কার্টুন আর হাজার হাজার ডকুমেন্টারির বিষয়বস্তু এন্টি-সোভিয়েত বা এন্টি-রাশিয়া, অর্থাৎ রুশোফোবিয়া। বরং ব্রিটেনের চেয়ে আমেরিকার কালচারাল হেজিমনি আরও তীব্র, আরও ঘৃণিত এবং ব্লান্ডার প্রপাগান্ডা। দুঃখজনক হলো এই দুটো দেশ-ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বের প্রায় ৭০ ভাগ টিভি, মুভি, সাহিত্য, কবিতা, গল্প-উপন্যাস, কমিকস, কার্টুন আর হাজার হাজার ডকুমেন্টারির বাজারের প্রধান সেলার এবং ম্যানুফ্যাকচারার।

.

📌 দুঃখজনক হলো আমাদের বাংলাদেশের তথাকথিত শিক্ষিত মহলে যত হিউমার বা জোকস কিংবা ‘চুটকি’র প্রচলন দেখা যায় তার অধিকাংশই রাশিয়াকে কেন্দ্র করে, রাশিয়া-বিরোধী এবং সোভিয়েত তথা কমিউনিস্ট নেতাদের হেয় প্রতিপন্ন করে বানানো। বাংলাদেশের এরা মার্কিন এবং ব্রিটেনের বা পশ্চিমাদের এন্টি-সোভিয়েত, এন্টি-কমিউনিজম, এন্টি-রাশান হেইটস্পিচের চেয়েও নগ্নভাবে এইসব তৃতীয় শ্রেণির কৌতুক প্রচার করে বিমলানন্দ লাভ করে! এক সময়কার বামপন্থী বা সমাতন্ত্রী দল করা লোকদেরও দেখা যায় ‘রুশোভস্কি অশ্লীল’ কৌতুক করে পশ্চিমা রক্তের উত্তরাধকিারের জানান দিচ্ছে!

.

📌 ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। তার পর থেকে বিশ্বজুড়ে তীব্র রুশোফোবিয়া চলছে। রাশিয়ান সমাজের এমন কোনো সেক্টর নেই যেটা স্যাঙ্কশনের কবলে পড়েনি। কিন্তু রুশ জাতি-বিদ্বেষ কি এখন শুরু হয়েছে? মোটেও নয়। ইউক্রেনে এটা শুরু হয়েছে ১৯৯১ সালের পর থেকে। তীব্রভাবে শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে তথাকথিত ‘ইউরোমাইডান’ অভ্যুত্থানের পর থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়ান নিরাপরাধ শিশুদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যের নৃশংস নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সমানতালে রুশোফোবিয়া চলছে। যা এতটাই জঘন্য এবং জাতিবিদ্বেষী যে তার সঙ্গে কেবল নাজিদের জাতি-বিদ্বেষের তুলনা চলে, এবং এর পালের গোদাও সেই পশ্চিমারা। ইউক্রেন ও তাদের ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের ঘটনার প্রতি এতটাই এ্যাটাচড যে রাশিয়ান সাধারণ জনগণ ও রাশিয়ান সরকারের পার্থক্য ভুলে গেছে।যুদ্ধকে ঘৃণা করা এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলা খুব স্বাভাবিক, তাই বলে রাশান জনগণকেও দায়ী করতে হবে? ওরা তাই-ই করছে।

.

📌 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা সারা পৃথিবীজুড়ে তাদের অবৈধ সামরিক অভিযানের জন্য কী কোথাও জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছে? না, হয়নি। অথচ রাশিয়াকে তথা রাশিয়ান সাধারণ জনগণকে আক্রমণ করা যেন ফ্যাশনেবল হয়ে উঠেছে। এমনকি পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে শিশুদের মনে এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে— ‘রাশিয়ানরা নির্মম-নিষ্ঠুর এবং অনৈতিক’। বেশিরভাগই টেলিভিশনে, সিনেমায়, থিয়েটারে এবং শহরের রাস্তা-ঘাটে এইসব জাতি-বিদ্বেষী প্রচার চলছে সভ্যতার ব্যানারে! আমেরিকান শিশুদের ‘কোল্ড-ওয়ারের’ বছরগুলিতে টিভি সিরিজ ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ রকি অ্যান্ড বুলউইঙ্কল অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছিল। যার প্রধান ভিলেন ছিলেন রাশিয়ান গুপ্তচর বরিস ব্যাডেনভ এবং নাতাশা ফাতালে। হলিউডে খলনায়কের ভূমিকায় রাশিয়ানদের দেখানোর এমন উদাহরণ হাজার হাজার না হলেও শত শত্। এই বর্ণবাদী স্টেরিওটাইপ পশ্চিমা মস্তিষ্কে এতটাই গভীরভাবে গেঁথে গেছে যে বেশিরভাগ লোকই কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই এসব বিশ্বাস করে।যা বাস্তবিকভাবে ‘মগজ ধোলাই’। হলিউডের চিত্রনাট্যকারদের এসব ‘প্রতিভা’ সহজাত! বহু বছর ধরে অবিরাম মিডিয়াস্ফিয়ারে এসব প্রচারণা চলছে।

.

📌 ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের বেইজিংয়ে ‘শীতকালিন অলিম্পিক’-এর কথা মনে আছে সবার। সেখানে কামিলা ভ্যালিভা নামে রাশিয়ার এক ‘বিস্ময় বালিকা’ ফিগার-স্কেটিং আইকন হয়ে ওঠেন। ওর বয়স মাত্র ১৫ বছর। এর আগেই ভ্যালিভা ২০২২-এর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন, ২০২১-এর রোস্টেলকম কাপ চ্যাম্পিয়ন, ২০২১-স্কেট কানাডা আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন, ২০২২-এ রাশিয়ান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এবং ২০২১-এ রাশিয়ান জাতীয় রৌপ্য পদক বিজয়ী।

বেইজিংয়ে অলিম্পিক শুরু হলে ভ্যালিভা ফিগার-স্কেটিংয়ে বিচারকদের তাক লাগিয়ে স্বর্ণপদক জেতেন। আর ঠিক ওই সময়ে তার নামে অভিযোগ তোলা হয়—তিনি গত বছর ডিসেম্বরে ডোপ টেস্টে ‘পজিটিভ’ হয়েছিলেন! প্রথমে IOC এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এরপর মার্কিন USA TODAY’র সাংবাদিক-কলামিস্ট ক্রিস্টিন ব্রেনান দাবি করেন “রাশিয়াকে অলিম্পিকের পরবর্তী দুটি আসর থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ রাশিয়া প্রতারণা করেছে!” ব্রেনান টুইটারে ক্রমাগত এইসব লিখে শেষ পর্যন্ত ভ্যালিভাকে নতুন করে ডোপ টেস্ট করিয়ে ছেড়েছিল। ভ্যালিভাকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনার নষ্টামি CNN-ও করেছে। যেখানে ব্রেনান ইউএস অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সির (USADA) প্রধান ট্র্যাভিস টাইগার্টের সাথে মিটিং করে “রাশিয়া চিটিং করেছে, ভ্যালিভা চিটার’ এইসব প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছিল। এরপর IOC ও রাশিয়াকে ‘প্রতারণার’ দায়ে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে উদ্যত হয়। ব্রেনান, ওয়েটজেল এবং অন্যান্য পশ্চিমা সাংবাদিকদের মূল আক্রমণ ভ্যালিভা নয়, রাশিয়া। ভ্যালিভার খেতাব বাতিল করে পুনরায় ডোপ টেস্ট করে ITA. বিষয়টি আদালতেও ওঠে। আদালত মাত্র ১৫ বছরের মেয়েটিকে কোনো অপরাধের আওতায় আনতে পারে না। ততদিনে ১০ দিন পার হয়েছে। রায়ে কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট (CAS) ভ্যালিভাকে আবার প্রতিযোগিতার জন্য ছাড়পত্র দেয়। IOC কর্মকর্তারা স্বীকার করেন— “ভ্যালিভাকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টাকারীদের মধ্যে যারা ছিলেন তাদেরকে মনে করিয়ে দেব যে এই মামলাটি এখনও শেষ হয়নি, সিএএস এটি খুব পরীক্ষা করছে। আসলে, বি-নমুনাটি খোলাও হয়নি… কেসটি এখনও শেষ হয়নি, তাই এই হেইস্পিচ দেয়া বাড়াবাড়ি”। ভ্যালিভা কেস নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া গুজবে লিপ্ত হচ্ছে তা স্রেফ ‘রুসোফোবিয়া’।যা দীর্ঘকাল ধরে তারা করে আসছে।

.

📌 এটা ছিল এক জঘন্য ষড়যন্ত্র। ভ্যালিভাকে আউট করতে পারলে টিমগতভাবে রাশিয়া দুই নম্বরে নেমে যাবে, ইউএসএ উঠে আসবে এক নম্বরে! এর পর পরই রাশিয়ান অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি- (RUSADA) স্যাম্পল পাঠিয়েছিল ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (WADA) স্বীকৃত সুইডেনের একটি পরীক্ষাগারে। বেইজিংয়ে ভ্যালিভার অস্থায়ী স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য RUSADA শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত CAS-এ সত্য প্রমাণিত হয়েছিল, অথচ সমস্ত পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের টার্গেটই ছিল ভ্যালিভাকে আউট করা। এই প্রেক্ষিতে চায়না নিউজ সার্ভিস সবকিছুর মধ্যে ‘ভ্যালিভা শিকার’-এর গন্ধ পেয়ে রিপোর্টও প্রকাশ করেছিল।

.

📌 এরপর যেটা হলো—কামিলা ভ্যালিভা দায়মুক্তি পেলেন। আবার রিংয়ে ফিরলেন। পারফর্ম করলেন, কিন্তু তা আর আগের মত হলো না। একবার স্লিপ করে বসলেন! একটা ১৫ বছরের কিশোরীকে যখন “ডোপ-টেস্ট পাপী” বলা হয় এবং তাকে ফাইট দিয়ে ফিরে আসতে হয় তার মনবল অটুট থাকার কথা নয়। ভ্যালিভা কাঁদতে কাঁদতে রিং ছাড়েন…..কিন্তু ওই ঘটনার পর পরই হয়ে ওঠেন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এক তারকা। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে তার সঙ্গে দেখা করে তাকে “জাতীয় বীর” আখ্যা দেন। পুরস্কৃত করেন। সবচেয়ে ঘেন্নার ব্যাপার হলো ওই মার্কিন সাংবাদিক, স্পোর্টস টিম, ডেলিগেটদের কম্পিটার চেক করলে দেখা যাবে তারা শত শতবার ভ্যালিভার পারফমেন্স দেখেছেন! ওই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাশিয়াতে পুতিনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব—কামিলা ভ্যালিভা! আ লিভিং লিজেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড।

To be continued…

📌 কীভাবে ইউক্রেনীয় শিশু-কিশোরদের রাশিয়ানদের ঘৃণা করতে শেখানো হয়েছিল সেটা পরের পর্বে আসবে।

……………………………

Monjurul Haque

5th June, 2022

#Russia, #Ukraine, #War, #NATO, #Midea, #JournalismIsNotACrime, #Arms, #Lethal_weapon, #UK,##donetsk,#Luhansk,#Russophobia

4 responses to “#Chronicles_of_Russia_Ukraine_war_64

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান