আজ ২২ এপ্রিল কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিপিআই(এম-এল) জন্মের ঐতিহাসিক দিন

🔴

৫৫টা বছর পার হয়ে গেছে। আজও ভারতের শাসকদের কাছে, শাসকআশ্রিত রংবেরঙের সংশোধনবাদীদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম—চারু মজুমদার। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল গড়ে ওঠে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী বা সিপিআই(এম-এল)। আজ সেই ২২ এপ্রিল, ভারতবর্ষের সর্বহারা শ্রেণি তথা কৃষক-শ্রমিকের মুক্তির দিশারী কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে গড়ে তোলা ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)- র জন্মদিন।

🔴

নক্সালবাড়ীর কৃষক অভ্যুত্থান তিনটি মূল বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছিল- ১. মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে মতাদর্শগত তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা। ২. কৃষি-বিপ্লবকে আঁকড়ে ধরা। এবং ৩. সশস্ত্র বিপ্লবী পথে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা। এই তাত্ত্বিক ভিত্তির ওপর গঠিত CPI (M-L) কমরেড চারু মজুমদারের মৃত্যুর পর বহুধা বিভক্ত হয়ে নতুন নতুন দল গড়ে ওঠার এত বছর পরও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।

🔴

কমরেড চারু মজুমদার পার্টি গঠন সম্পর্কে তাঁর ঐতিহাসিক ৮ দলিল-এর প্রথম দলিলে সেই ১৯৬৭-৬৮ সালে যা বলেছিলেন— “ভারতের ধনিক শ্রেণী তার আভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানের কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। স্থায়ী খাদ্য সংকট ও ক্রমবর্দ্ধমান মূল্যমান পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে এবং তারই ফলে আরও বেশী করে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি আমদানী করা ছাড়া ভারতীয় ধনিক শ্রেণীর এই সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার আর কোন পথ নেই। সাম্রাজ্যবাদের প্রতি এই নির্ভরশীলতার জন্য ধনতন্ত্রের আভ্যন্তরীণ সংকট দিনের পর দিন বাড়তে বাধ্য। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্দ্দেশে এবং নিজের আভ্যন্তরীণ সংকটের সম্মুখীন হয়ে ভারতীয় ধনিক শ্রেণী গণতন্ত্রকে হত্যা করা ছাড়া অন্য কোন পথ খুঁজে পায় না।” তা কি এখনও প্রাসঙ্গিক নয়? পুঁজিবাদী বিকাশে শিল্পোন্নয়ন হয়েছে, ভারত চাঁদে রকেট নামিয়েছে, বিশ্বজুড়ে আইটি সেক্টর দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার পরও দণ্ডাকরণ, জঙ্গলমহাল, বিহার, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ মাত্র গোটা কয়েক বিজনেস টাইকুনের হাতে জিম্মি। সেখানে মানুষ জমি থেকে উচ্ছেদ ঠেকাতে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে।

🔴

তিনি আট দলিলে আরও বলেছিলেন—“আগামী যুগ শুধু বৃহৎ মাত্র সংগ্রামেরই যুগ নয়; বৃহৎ জয়েরও যুগ এবং এই যুগের জনতার বিপ্লবী সংগ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে কমিউনিস্ট পার্টিকে। এবং সে দায়িত্ব আমরা সার্থক ভাবে পালন করতে পারবো। তখনই যখন পার্টি সংগঠনকে বিপ্লবী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।

বিপ্লবী সংগঠন গড়ার প্রধান ভিত্তি কি? কমরেড স্তালিন বলেছেন- ‘বিপ্লবী কর্মী’। বিপ্লবী কর্মী কাকে বলে? বিপ্লবী কর্মী হচ্ছে সেই যে নিজের উদ্যোগে ঘটনার বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ করতে পারে।”

🔴

সেই ষাটের দশকে পশ্চিম বাংলা থেকে যে বিপ্লবের আগুন অন্ধ্র, বিহার উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট, মধ্যপ্রদেশ হয়ে সারা ভারতের এবং পার্শ্ববর্তি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনকে পথ দেখিয়েছিল। আজও তেমনি পথ দেখাচ্ছে। চারু মজুমদার শহীদ হওয়ার পর বহুধা বিভক্ত সিপিআই (এম-এল) বারে বারে সংগঠিত হয়েছে, আবার ভেঙ্গেছে, আবার সংগঠিত হয়েছে। এখনো এই গড়ার প্রক্রিয়া চলেছে অবিরাম। চারু মজুমদার আজ নেই, কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে সেই ভারত কাঁপানো কৃষক আন্দোলন কিভাবে গোটা ভারতবর্ষের সংস্কৃতিকে ঝাঁকি দিয়েছিল। সেই আলোড়ন আজও সমানভাবে আলোড়িত হচ্ছে। ভারতীয় তথা উপমহাদেশের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি না আসা অবধি সে লড়াই চলবে….

………………………….

মনজুরুল হক

২২ এপ্রিল, ২০২৪

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান