Everyone on Earth will die!

বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কারের উৎস কী? অবশ্যই নেসেসিটি। প্রথমে প্রয়োজন, তারপরে কল্পনা এবং শেষে সেই কল্পনার বাস্তব বাস্তবায়ন। তারও পরে ক্রমান্বয়ে তার বিকাশসাধন। মানুষের উড়তে চাওয়ার কল্পনা থেকেই উড়োজাহাজের সৃষ্টি। বিখ্যাত ফরাসী ঔপন্যাসিক, কবি ও নাট্যকার জুল ভার্ন সেই আঠারো শতকেই কল্পনা করেছিলেন মানুষ উড়তে পারবে। তার বিজ্ঞান কল্পকাহিনী Voyages extraordinaires, Journey to the Center of the Earth, Twenty Thousand Leagues Under the Seas, এবং Around the World in Eighty Days উপন্যাসগুলোই মানুষকে যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছিল। মানুষ বানাতে শিখেছিল উড়োজাহাজ, রকেট, সাবমেরিন। সুতরাং আজকে যাকে আমরা কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের কল্পকাহিনী বলছি, কালকে তা বাস্তব হতেই পারে। আর সেই সম্ভবনা মাথায় রেখেই এখনকার চরম বিস্ময়- AI বা ‘Artificial Intelligence’ এবং ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া জাগানো ChatGPT মানব সভ্যতাকে শেষ করে দিতে পারে! সেরকমটাই মনে করেন MIRI বা Machine Intelligence Research Institute-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা Eliezer Yudkowsky. গত মাসের ২৯ তারিখে বিখ্যাত TIME magazine-এ এক নিবন্ধে তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন— ‘Everyone on Earth will die’!

☢️

এলিজার ইউডকোস্কি আশঙ্কা করছেন মানব সভ্যতা তাদের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য প্রস্তুত নয়।বিশ্বজুড়ে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে হবে এবং যারা ছড়াচ্ছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এটাই মানব সভ্যতাকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়। যদিও এলিজার ইউডকোভস্কি ‘অন্তত ছয় মাস সকল ধরণের AI ল্যাব বন্ধ রাখা হোক যাতে করে GPT-4 এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী AI সিস্টেমের প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকবে’-এমন পিটিশনে স্বাক্ষর করেননি। তার মতামত হলো—‘এসব কারা বানাচ্ছে? ইলন মাস্ক এবং অ্যাপলের ‘স্টিভ ওজনিয়াক’ যারা বানিয়েছে তারাই তো?’ তার মতে এসব কোনো সমাধান নয়। ছয় মাস বন্ধ থাকার পর কী হবে? আবার চালু হবে না? তাতে করে কি হবে? বর্তমানে যা আছে তার থেকেও শক্তিশালী একটি অতিমানবীয় স্মার্ট AI তৈরির সম্ভাব্য ফলাফল হল আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর সবাই মারা যাবে!’

☢️

একটা কম্পিউটার সিস্টেমের সমস্যা হলো সে আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যা যা করবে তা মোটেও সাধারণ জীবনের জন্য সংবেদনশীল নয়, কারণ তার তো অন্তর্দৃষ্টি নেই। মানুষকে সার্ভাইভ করতে হলে শুধু নির্ভুল হলে চলবে না নতুন বৈজ্ঞানিক অন্তর্দৃষ্টিও থাকতে হবে যা এইমুহূর্তে মানুষের হাতে নেই এবং অদূর ভবিষ্যতে পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

☢️

তার চেয়েও পিলে চমকানো কথা হলো—‘একটা অতিমাত্রায় বুদ্ধিমান AI দীর্ঘকাল কম্পিউটারে সীমাবদ্ধ থাকবে না!’ ইউডকভস্কি ব্যাখ্যায় বলেন— প্রোটিন তৈরির জন্য পরীক্ষাগারগুলোতে ডিএনএ স্ট্রিংগুলো ইতিমধ্যেই ইমেল করা সম্ভব, যা হয়ত AI কে ‘কৃত্রিম জীবন গঠন করতে বা সরাসরি পোস্টবায়োলজিক্যাল অ্যাটোমিক প্রডাকশনে বুটস্ট্র্যাপ করতে পারে, এবং একসময় তারা কম্পিউটার ছেড়ে বর্হিবিশ্বে বেরিয়ে আসার অনুমতি দেবে!’

☢️

ইউডকস্কি সর্বশেষ সাবধান করে বলেছেন—‘বিশ্বব্যাপী নতুন AI প্রশিক্ষণ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করতে হবে। সরকার বা সামরিক বাহিনীসহ কোন প্রতিষ্ঠান করতে পারবে না, এবং অবিলম্বে যে কেউ এই ধরনের সিস্টেমের প্রশিক্ষণে কতটা কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করতে পারবে তার সিলিং নির্ধারণ করার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর হুমকি এতটাই বড় যে তা ‘পারমাণবিক যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির মতই গুরুদ্বপূর্ণ’। সুতরাং AI বা GPT-4 এর বিপদ কোনো অংশেই পারমানবিক যুদ্ধের বিপদের চেয়ে কম নয়। পৃথিবী এবং মানব সভ্যতাকে টিকে থাকতে হলে অবিলম্বে এই সকল ‘অতি উচ্চাভিলাষী প্রযুক্তি’ থেকে সরে আসতে হবে।’

☢️

এ পর্যন্ত পড়ার পর অনেকেরই মনে হতে পারে; বিশ্বে একবার কেনো প্রযুক্তির জন্ম হলে তার বিকাশই হয়, ধ্বংস নয়। AI বা GPT-4 নিয়ে যে সব আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে তা অমূলক এবং বিজ্ঞানবিরোধী। সেই তাদের বা আমাদের জন্যই উপরে জুল ভার্নের রেফারেন্স টেনে রেখেছি। তার লৌহ গোলকের ভেতর বসে সেটাকে কামানের গোলার মত ছুঁড়ে চাঁদে যাওয়া, ১ হাজার ফুট সমুদ্রের গভীরে যাওয়া বা আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ পড়ে মানুষ তাকে ‘গাঁজাখোর’ বলেছিল। ঠিক তেমনি আজকের MIRI এর সহ প্রতিষ্টাতা এলিজার ইউডকোস্কিকেও ‘বেহেড মাতাল’ মনে হতে পারে। তাতে করে বিপদ কিন্তু কমে না। আজকে সায়েন্স ফিকশন মুভিতে যে ‘হিউম্যান বডি ট্রান্সফার’ দেখানো হয় সেটা আজকের অনুমান নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে এঁটে উঠতে না পেরে আমেরিকা গোপনে একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিল, যার নাম ছিল ‘ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট’। চৌম্বকীয় আবেশে একটা মানুষ ভর্তি জাহাজ ট্রান্সফার। যা ফলপ্রসূ হয়নি, এবং মানব দেহে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। সেই থেকেই বিজ্ঞানের ওই এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ রয়েছে। যদিও চীন ম্যাগনেটিক ফিল্ড ক্রিয়েট করে রাতেও সূর্যের আলো পাবার প্ল্যান কষছে বহুদিন ধরে।

☢️

মনে করুন কোনো ব্যবহারকারীর নির্দেশে GPT পোস্টবায়োলজিক্যাল অ্যাটোমিক সেল রিলিজ করে অ্যাটমোস্ফীয়ারে ছেড়ে দিল। সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে প্রথমে শত শত পরে হাজার হাজার টার্মিনেটর পয়দা হয়ে গেল! এবার আর এক নির্দেশে তাদেরকে ডিমোলিশ হিউম্যান কমান্ড করা হলো। এবার ভাবুন কী হতে যাচ্ছে…? ইতালি সবার আগে AI এবং GPT নিষিদ্ধ করেছে। অনেক দেশই নিষিদ্ধ করার পথে…।

☢️

লেখার সূত্র: ‘Everyone on Earth will die,’ top AI researcher warns.. TIME via RT

#Monjurul Haque

5th April 2023

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান