বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণির মহান নেতা কমরেড যোসেফ স্তালিনকে জন্ম দিনে রেড স্যালুট

সোভিয়েত ইউনিয়নসহ এই গোলার্ধের দেশগুলোর রক্ষাকর্তা, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ধারাবাহিক বিকাশকারী জোসেফ স্তালিনের ১৪৫তম জন্মদিন আজ। আমাদের লাইফ কনভয় থেকে লড়াই থেমে গেছে। আমরা পুঁজিবাদী বুর্জোয়াদের লাথি-গুঁতো খেয়ে কেঁচোর মত গুটিয়ে আত্মমেহন করতে থাকি….এই শোষকদের লাথিটা আগের শোষকদের মত কী-না সে তুলনা করে নিজেকে প্রবোধ দিই। আমরা আমাদের শ্রেণির জনগণকে জাগাতে পারি না, বাঁচাতে পারি না, তাই নিজেরাও বাঁচতে পারি না।

🚩

এতকিছুর পরও খোদ রাশিয়ায়, যেখানে স্তালিনকে ত্যাগ করা হয়েছিল সেখানেই তিনি কিছুটা হলেও স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন করেছেন। তাঁর জন্মবার্ষির্কী নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ হচ্ছে। তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হাজার হাজার মানুষ রেড স্ক্যয়ারে ছুটে যাচ্ছ গত কয়েক বছর ধরে। এটা যে তাঁকে সত্যি সত্যিই শ্রদ্ধা করে কিংবা আদর্শ নেতা মেনে করা হচ্ছে তেমন কোনো শক্ত প্রমাণও নেই। হতে পারে নব্য জাতীয়তাবাদী রাশিয়া সোভিয়েতের শক্তিমত্তাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে, কারণ এখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জয়ের নায়ক স্তালিন। অথচ আমাদের দেশের একপেশে ইতিহাস জানা কমিউনিস্টরা জেনে-না জেনে ভোল পাল্টানোর মচ্ছবে আশির দশকে স্তালিনকে ‘ত্যাগ’ করেছে। তাদের কাছে সেই ‘ত্যাগের’ শক্তিশালী কোনো ‘কারণ’ও নেই! তার বিরুদ্ধে অভিযোগেরও কোনো শক্ত প্রমাণ নেই। তার পরও সেই ত্রিশের দশকের ইবলিস বুর্জোয়াদের মত এরাও ঢালাওভাবে স্তালিনের বিরোধীতা করে চলেছেন। এবং এটা এক ধরণের ‘ফ্যাশন’ এর মত! যেন স্তালিনের বিরোধিতা না করলে আপটুডেট থাকা যাবে না! এটাকে কী নাম দেওয়া যেতে পারে? অপলিটিক্যাল স্টুপিডিটি?

🚩

স্তালিনের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের অন্ত নেই, অথচ আজকের অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সোভিয়েত আমলের সমস্ত গোপন নথিপত্রই ঘেঁটে দেখে খুব সহজেই বের করা সম্ভব, ঠিক কতজন সেদিন সোভিয়েত ইউনিয়নে বন্দী ছিলেন, কে কত বছর সেখানে বন্দিশালায় কাটিয়েছেন, কতজন বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন, বা ঠিক কতজনকে সেদিন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৃত সংখ্যা জানার ক্ষেত্রে আজ আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু কী পাওয়া গেল সেখানে? দেখা গেল, এতদিনের বহুল প্রচারিত গল্পের সাথে প্রকৃত সত্যের মিল নেই। কারা এই গল্পগুলো রটিয়েছিল তা খুঁজলে দেখা যাবে, হিটলার থেকে হার্স্ট, কনকোয়েস্ট থেকে সোলঝেনিৎসিন, সকলেই এর সঙ্গে যুক্ত। হালে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান CIA স্বীকার করেছে যে স্তালিনকে কালিমালিপ্ত করে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা কোটি কোটি ডলারের ফান্ড পেয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে সেই টাকা খরচ করে দালাল এবং ভাঁড় কিনে তাদেরকে দিয়ে স্তালিনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়েছিল।

🚩

অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শত্রুতার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রকে যতটা সম্ভব গড়ে তুলেছিলেন ও সংহত করেছিলেন। স্তালিনই সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়ন ও কৃষির খামারিকরণের লাইনকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে সোভিয়েত পার্টি ও জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার, স্তালিনই পরে পার্টি ও জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যখন সোভিয়েত লাল ফৌজ এক অকল্পনীয় কঠিন লড়াইয়ে (১৯৪১-৪৫) জয়ী হয়েছেন এবং ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট অক্ষশক্তিকে পরাজিত করে এক বিশ্বব্যাপী ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। এই দায়িত্ব পালনের মধ্যবর্তী সময়ে স্তালিনই পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যখন পার্টি সর্বপ্রকার সুবিধাবাদ ও বিকৃতিবাদ-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, ট্রটস্কি, জিনোভিয়েভ ও কামেনেভ এবং পরে বুখারিন ও রাইকভ পরিচালিত গোষ্ঠীর কার্যত পরাজিত মনোভাব ও বিভেদকামী কার্যকলাপকে উচ্ছেদ করে মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে রক্ষা ও বিকশিত করেছে। সাফল্যের এই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ সমাজতন্ত্রের বিজয়ের সঙ্গে একীভূত হয়ে তাঁর নাম হৃদয়ে ও ঠোঁটে নিয়ে যোদ্ধারা স্তালিনগ্রাদে, বার্লিনের মুখে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের সমস্ত ফ্রন্টে ফ্যাসিস্ট হিটলারের বাহিনীর কণ্ঠনালি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।

🚩

স্তালিনবিরোধী এইসব রূপকথার গল্পের প্রধান উপজীব্য ছিল গুজব, পরনিন্দাচর্চা এবং অসমর্থিত জনশ্রুতি। স্তালিনকে নিয়ে লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠা নিন্দা, বিষোদগার, হিংসা বর্ষণ, সমালোচনা করা হয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোনো একজন মানুষকে নিয়ে এত এত নিন্দুকের তীর ছুটে গিয়েছে যা রীতিমত অভূতপূর্ব। স্তালিন পার্টিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার পরও তাকে নিয়ে কমিউনিজমবিরোধীরা এতটা সরব ছিল না। কিন্তু স্ত্যালিনের হাতে জার্মানির পতন হলে সকল কৃতিত্ব স্ত্যালিনের হাতে ওঠাটা মেনে নিতে পারেনি রুজভেল্ট, চার্চিলরা। জার্মান অগ্রগামী বাহিনী যখন মস্কো দখলের জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে তখনো প্রতিআক্রমণের বদলে ‘কৌশলগত পশ্চাদপসারণের’ নাটক করতে চেয়েছে রুজভেল্ট, চার্চিল।

🚩

বিশ্বযুদ্ধের আয়ুষ্কাল ৫ বছর ৮ মাস। এই দীর্ঘ সময়ে একের পর এক জনপদ দখল করে নিয়েছিল জার্মান বাহিনী। প্রায় ৬ কোটি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। যার মধ্যে ৬০ লাখ মানুষকে বন্দিশিবিরে প্রাণ দিতে হয়েছিল। একদিকে জার্মান বাহিনীর অগ্রাভিযান অন্যদিকে জাপানের অগ্রাভিযান। বিশ্বের দুই প্রান্ত থেকে দখলদারিত্ব কায়েম হতে থাকলে সে সময়কার ব্রিটিশ শাসনাধীনের ভারতকেও ২৫ লাখ সৈন্য সরবরাহ করতে হয়েছিল ইয়োরোপ, এশিয়ায়। তাদের মধ্যে অনকে বাঙালিও ছিল। পুঁজিবাদীরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আর সমাজতন্ত্রের সবকিছুর বিরোধিতা করলেও এটা স্বীকারে কুণ্ঠাবোধ করে না যে বিপুল বিক্রমে অগ্রসর হওয়া জার্মান বাহিনীর হাতে রাশিয়ার পতন হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেকটা হিটলারের অধীনে চলে যেত এবং বিশ্বের মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতো। সেই ভয়াবহ বিপদ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছিলেন জোসেফ স্তালিন। তার বিচক্ষণ আর সাহসী নেতৃত্বে জার্মান বাহিনীর অগ্রাভিযান রুখে দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল ফৌজ।

🚩

ইয়োরোপ-আমেরিকা যুদ্ধজয়ের এবং আত্মত্যাগের যে বড়াই করে সেটিও বাতিলযোগ্য, কারণ ওই যুদ্ধে সোভিয়েত সৈন্য মারা গিয়েছিল প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ! তার বিপরীতে বাকি মিত্র বাহিনীর নিহত সৈন্য সংখ্যা মাত্র ১০ লাখ!

কিন্তু স্তালিনের সেই কৃতিত্বকে খাটো করে তারা কেবলই পশ্চিমা কৃতিত্ব দেখে। কখনোই আসল বীরত্ব দেখে না। এমনকি কখনো কোনো আলোচনায় সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলা হলেও স্তালিনের অবদানের প্রসঙ্গ কৌশলে বাদ দেয়া হয়। স্তালিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য রীতিমত আমেরিকা ব্রিটেনে ফান্ড তৈরি করা হয়েছিল। শত শত লেখক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ভাড়া করা হয়েছিল। তাদের একমাত্র কাজ ছিল যে যেখান থেকে পারে স্তালিনবিরোধী নোট, ঘটনাবলির বর্ণনা, বিবরণ, দলিল, চিঠিপত্র যোগাড় করে তার সাথে মনের মাধুরী মিশিয়ে রূপকথার গল্প তৈরি করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া।

🚩

এই জন্মদিনের লেখায় স্তালিনের অবদানের যে বিশাল ভাণ্ডার তা পুরোপুরি বলা যাবে না। তাই সংক্ষেপে-

🚩 সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়নে লেনিনের কর্মসূচি বাস্তবায়িত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেকে একটি পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী শিল্প-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করেছিল।

🚩 ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছড়িয়ে থাকা কৃষকদের একক জমিজমাকে বৃহৎ যন্ত্রচালিত সমাজতান্ত্রিক খামারে ঐক্যবদ্ধ করার লেনিনের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা হয়েছিল।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিকাশে স্তালিনের অনেকগুলো তাত্ত্বিক রচনা খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল। এইসব রচনায় তাঁর চিন্তার-পাণ্ডিত্যের তুলনাহীন সহজ সরল প্রকাশ, অগ্রণী শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক চেতনা সঞ্চারে এবং সমগ্র কমিউনিস্ট প্রজন্মকে গড়ে তোলার কাজে বিপুল অবদান রেখেছিল।

🚩 জাতি-সম্পর্কিত সমস্যা প্রসঙ্গে লেনিনের শিক্ষাকে স্তালিন আরও ব্যাপক ও উন্নত করেছিলেন। জার শাসনে নিপীড়িত জাতিসমূহ নবজীবনে জেগে উঠেছে; প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটিয়েছে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে জাতিসমূহের একটি পরিবারে পরিণত করেছিল।

🚩 স্তালিনের শিক্ষা বলে, শান্তি তখনই সুরক্ষিত হতে পারে যদি বিশ্বের জনগণ শান্তির স্বার্থ নিজেদের হাতে তুলে নেয় ও তার জন্য লড়াই করে এবং সারা বিশ্বজোড়া লক্ষ লক্ষ শান্তিকর্মীদের এক নতুন যুদ্ধের প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে চালিত করে। সোভিয়েত ইউনিয়নই হলো আজ শান্তি ও জনগণের মধ্যে মৈত্রীর দৃঢ় রক্ষক।

🚩 খুবই কঠিন এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে সমাজতন্ত্রের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ১ মে, ১৯৪৫ কমরেড স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত লালফৌজ বার্লিনের রাইখ্স্ট্যাগে রক্তপতাকা উড়িয়ে মানবজাতির চরমতম শত্রু ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘোষণা করেছিলেন।

🚩 ফ্যাসি-বিরোধী যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল প্রথম স্থানে। এই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন ২ কোটি সোভিয়েতবাসী। যুদ্ধের সময় শিশুসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে জার্মানিতে দাস শ্রমিক হিসেবে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েতে ৫৩ লক্ষ যুদ্ধবন্দির মধ্যে যুদ্ধের শেষে মাত্র ১০ লক্ষকে জীবিত পাওয়া গিয়েছিল। ফ্যাসিস্টদের আক্রমণে চরম ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছিল সোভিয়েতের ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজারেরও বেশি শহরকে, ৭০ হাজার গ্রামকে, ৩২ হাজার শিল্প সংস্থাকে এবং ৯৮ হাজার যৌথ ও রাষ্ট্রীয় খামারকে।

🚩 কমরেড স্তালিনের সুযোগ্য নেতৃত্বে সমস্ত যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রমাণ করে দিয়েছিল তার সমাজতান্ত্রিক দৃঢ়তা। শুধু তাই নয়, পূর্ব ইয়োরোপের সদ্য মুক্ত হওয়া দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যেও সোভিয়েত তার সমগ্র শক্তিকে ব্যবহার করেছিল। এইভাবে যুদ্ধে বীভৎসতা কাটিয়ে কমরেড স্তালিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে দুনিয়ার তাবৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছিল।

🚩 এর পর গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখল এক অকুতোভয় যোদ্ধা জাতি কী বিপুল বিক্রমে পৃথিবীকে রক্ষা করল। গোটা পৃথিবীকে এক রক্তপিপাসু জাতির দাসত্ব করা থেকে বাঁচাল রেড আর্মি, বিশেষত কমরেড স্তালিনের তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার বুদ্ধি, অকপট দেশপ্রেম আর জনগণের ওপর অগাধ বিশ্বাস।

🚩 জানা যায় যুদ্ধে তাঁর প্রিয় পুত্রকে বন্দী করে জার্মানরা। বন্দী বিনিময় করতে চায় তাদের ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পউলাসের সাথে। তিনি রাজি হননি! এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় স্তালিনের কাছে দেশ আর নিজের সন্তানের মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ? লাল ফৌজের সর্বাধিনায়ক স্তালিন বললেন : I will not trade a Marshal for a Lieutenant!

তাঁর সমালোচকরা অবশ্য কল্পনাও করতে পারবেন না যে দেশের জন্য স্তালিন উৎসর্গ করে দেবেন নিজের ছেলেকেই!

🚩

‘কমরেড জোসেফ স্তালিনের বিশ্ব কীর্তি দীর্ঘজীবী হোক’ শিরোনামের লেখাগুলো স্তালিনকে নিয়ে বিপ্লবীদের উদ্ধৃতিঃ

🚩 “মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিকশিত রূপ, ওই দর্শনের তাত্ত্বিক শিক্ষাদীক্ষা

স্তালিনের মধ্যে দৃঢ় ভিত্তিতেই ছিল। মার্কসীয় দর্শন প্রয়োগ করে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র কায়েম করার ক্ষেত্রে তার অবদানই তার অন্যতম কৃতিত্ব। ট্রটস্কি, জিনোভিয়েভ, বুখারিনের এবং তাদের প্রতিবিপ্লবীদের সাথে তার শক্তিশালী তর্কযুদ্ধ আমাদের সময়ে এক অনবদ্য সংগ্রামের আদর্শ হয়ে উঠেছিল। তার এই অবদানই বিশ্ব পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সমাজতন্ত্র এবং কমিউনিজমকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিল। আর সে সময় এই সমগ্র সংগ্রামটি হয়েছিল স্তালিনের হাতেই, তারই শিক্ষাকে অবলম্বন করে।”

—ইউলিয়াম জে. ফস্টার

🚩 “এই সমগ্র সংগ্রামের সময় আমরা যারা কালো ছাত্র ছিলাম তারা স্তালিনের অবদান এবং কমিউনিস্ট পার্টিতে তার অবস্থান দেখে প্রদীপ্ত শিষ্য হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা ‘স্ট্যালিনিস্ট’ হয়ে উঠেছিলাম, যা ছিল মহামতি লেনিনেরই ধারাবাহিকতা। আজকের দিনে কে ‘স্ট্যালিনিস্ট’ বিশেষণটি ব্যবহার করবেন? আমরা কিন্তু সে সময় মনে করেছি স্তালিন এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সঠিক ছিল। আমি এখনও বিশ্বাস করি তিনি এবং তারা সঠিক ছিলেন।”

—হ্যারি হেউড

🚩 “আধুনিক জীবনচক্রে স্তালিনের প্রভাব অনেক গভীর এবং ব্যাপ্ত। তার সাধারণ একটি লেখাও ব্যাপক বিস্তৃত দলিল হয়ে ওঠে। সারা বছর তার অবদান আমাদের সমাজে এক অমূল্য সম্পদ হিসেবেই উদ্ধৃত হয়। সশ্রদ্ধচিত্তেই স্মরণ করতে হবে মার্কস, লেনিন এবং স্তালিনের বক্তব্য মানবতাকে সমৃদ্ধ করেছে। তা যেমন বর্তমানে সঠিক, তেমনি ভবিষ্যতেও সঠিক থাকবে।”

— পল রবসন

🚩 “জোসেফ স্তালিন একজন মহা মানব ছিলেন; বিংশ শতকে খুব কম মানুষই তার ‘মাপের’ ছিল। তিনি ছিলেন সাধারণ, শান্ত এবং সাহসী। তিনি কখনোই তার ভারসাম্য খোয়াতেন না। তার সমস্যাগুলো তিনি ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে এবং পরিষ্কারভাবে সমাধান করতেন। কখনোই জৌলুশ বা চাকচিক্যে বিভ্রান্ত হতেন না, এবং তিনি যাকে সঠিক মনে করতেন তা প্রতিষ্ঠিত করতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না, বরং তার অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে সততার সাথে প্রতিষ্ঠিত করতেন। তিনি একজন ভূমিদাস বা দায়বদ্ধ কৃষকের সন্তান ছিলেন, কিন্তু কখনোই তা স্বীকারে কুণ্ঠিত বা বিব্রত হতেন না। এবং এটাই তার বিশালত্ব প্রমাণ করে।”

—ডব্লিউ.ই.বি.ডিইউ বরিস

🚩 “এই দিনটি গণপ্রজাতন্ত্রী স্পেনের জন্য ছিল আনন্দ এবং জয়ধ্বনি করবার দিন। শহরে, গ্রামে, বন্দরে, সামনে-পেছনে, লাখো কণ্ঠ তাদের হৃদয় নিঃসৃত ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বলছিলÑ স্তালিন ! কারখানায়, বাঙ্কারে শ্রমিক এবং সৈন্যরা তাদের অস্ত্রপাতি, হাতুড়ি-বাটালি ঠুকে ‘ স্তালিন ’ বলে জয়ধ্বনি করছিল। শহরের সবচেয়ে সুন্দর স্ট্রিট এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনবসতিকে বলা হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের পথ। এবং প্রতিটি বাড়িতে, লোকালয়ে মর্যাদার সাথে

স্তালিনের ছবি জায়গা করে নিয়েছিল। কেননা এই দিনে স্পেন তার এক বছরের পুরনো শত্রু থেকে মুক্তি লাভ করেছিল।”

— লোরিস ইবারুরি

🚩 “স্তালিনের তথাকথিত ভ্রান্তি নিয়ে মিথ্যা প্রচারই বিপ্লবী মানসিকতা এবং প্রতিবিপ্লবী মানসিকতা পার্থক্য গড়ে দেয়। আপনাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে

স্তালিনকে দেখতে হবে তিনি যে পথে এসেছেন, আপনি তাকে একজন পশুসুলভ হিসেবে দেখতে পারেন না। কিন্তু সেই বিশেষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমি কমিউনিজমে এসেছিলাম এবং পিতৃসম স্তালিন এবং অন্য কেউ আমাকে বলেনি আমি অবশ্যই স্তালিন পড়িনি। আমি তাকে পড়েছি যখন তাকে পড়া খুব খারাপ অর্থ বহন করত। সেটা ছিল অন্য এক সময়। অবশ্যি আমি খুব উজ্জ্বল এবং শক্তপোক্ত মাথার মানুষ ছিলাম না। তার পরও আমি পড়ে গেছি… বিশেষ করে যখন তার লেখা পড়া খারাপ বলে বিবেচিত হতো। বলাবাহুল্য, আমি এখনও তাকে অধ্যয়ন করছি এবং তার কাছ থেকে যা পাচ্ছি তা অমূল্য।”

— আর্নেস্টো চে-গুয়েভারা

🚩 “স্তালিন মারা গেছেন। প্রগতিশীল মানবতার প্রজ্বলিত মহান হৃদয় তার স্পন্দন বন্ধ করেছে। এই দুঃখজনক খবরটি সারা কোরিয়াজুড়ে বজ্রবিদ্যুতের মতো ছড়িয়েছে। লক্ষ লক্ষ কোরিয়াবাসীর হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে, তাদের হৃদয়ে বড় ধরনের আঘাত লেগেছে। কোরিয়ার গণবাহিনী, সৈন্য, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র এবং উভয় কোরিয়ার সকল বসবাসকারীরা গভীর শোকসন্তপ্ত। সারা কোরিয়া যেন মাথা নত করে রয়েছে, এবং মায়েরা তাদের চোখের জল মুছছেন এবং শিশুর মতো ফোঁপাচ্ছেন।

— কিম ইল স্যুং

🚩 “স্তালিন কঠোর অধ্যবসায় দিয়েই মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ধারাবাহিক বিকাশ, প্রয়োগ এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে আরও উন্নত স্তরে তুলে নেয়া কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। তার সময়ের মতো ওইরকম বিরূপ সময়েও তিনি তার বিচক্ষণতা, ধীর স্থির মানসিকতা এবং বিশেষ যোগ্যতা দিয়েই এসব অর্জন করেছিলেন। যখন বুর্জোয়ারা প্রবল প্রতাপে প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছিল সে সময় তিনি সক্ষমতার সঙ্গেই মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ঝাণ্ডা তুলে ধরতে পেরেছিলেন।”

— এনভার হোক্সা

🚩 “স্তালিনকে অভিনন্দন জানানো কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়। স্তালিনকে অভিনন্দন জানানো মানে তাঁকে সমর্থন করা এবং সমাজতন্ত্রের বিজয়কে সমর্থন করা, এবং তিনি মানবতার মুক্তির জন্য যে দিকনির্দেশ করেছেন তাকে সমর্থন করা। তার মানে একজন প্রিয় বন্ধুকে সমর্থন করা। বিশ্বের বৃহৎ অংশের মানুষ মানবিকতার অভাবে ভুগছে। সেই মানবিকতা মুক্ত হতে পারে কেবলমাত্র স্তালিনের দেখানো পথে এবং তারই সাহায্যে।”

— মাও সে তুং

🚩 গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখল এক অকুতোভয় যোদ্ধা জাতি কী বিপুল বিক্রমে পৃথিবীকে রক্ষা করল। গোটা পৃথিবীকে এক রক্তপিপাসু জাতির দাসত্ব করা থেকে বাঁচাল রেড আর্মি, বিশেষত কমরেড স্তালিনের তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার বুদ্ধি, অকপট দেশপ্রেম আর জনগণের ওপর অগাধ বিশ্বাস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁর প্রিয় পুত্রকে বন্দী করে জার্মানরা। বন্দী বিনিময় করতে চায় তাদের ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পউলাসের সাথে। তিনি রাজি হননি! এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় স্তালিনের কাছে দেশ আর নিজের সন্তানের মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ? লাল ফৌজের সর্বাধিনায়ক স্তালিন বললেন : I will not trade a Marshal for a Lieutenant!

তাঁর সমালোচকরা অবশ্য কল্পনাও করতে পারবেন না যে দেশের জন্য স্তালিন উৎসর্গ করে দেবেন নিজের ছেলেকেই!

🚩

দুনিয়ায় শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের সংগ্রাম যতদিন ধরে চলবে, নিপীড়িত হৃদয়ের প্রতি স্পন্দনে অনুপ্রেরণার স্ফুলিঙ্গ হয়ে রইবেন কমরেড স্তালিন। প্লানেটের এই প্রান্ত থেকে কমরেড যোসেফ স্তালিনকে জন্মদিনে রেড সেলুট!

…………………………..

মনজুরুল হক

১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

.

তথ্য সূত্রঃ ‘স্তালিন মিথ্যাচার এবং প্রাসঙ্গিকতা’ — মনজুরুল হক, ঐতিহ্য প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৭

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান