সর্বহারা শ্রেণির মহান নেতা যোসেফ স্তালিনের ৭১তম মৃত্যুদিনে সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

‌““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““““

কমরেড যোসেফ বিসারিওনিস ডিজারি যুগাশভিলি স্তালিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুপ্রিম কমাণ্ডার। মানব জাতির রক্ষাকর্তা। ভ.ই. লেনিনের অসমাপ্ত সোভিয়েত-এর চূড়ান্ত রূপদানকারী মহান কমিউনিস্ট শিক্ষক কমরেড যোসেফ স্তালিন আজকের এই দিনটিতে মৃত্যুবরণ করেন।

📌

স্তালিনের নাম উঠলেই পশ্চিমা মিডিয়ার মরফিন আসক্ত ব্রেনে কেবলই ভেসে ওঠে-স্তালিন ‘গুলাগ’-এ লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছিলেন। ব্যাস! তাঁর সকল কৃতিত্ব পাশে ঠেলে তাঁকে ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ সাব্যস্ত করে বসেন এরা। ইতিহাসের ভুল পাঠ নেওয়া এইসব লোকজনের সঙ্গে তর্ক চলে না। তার পরও প্রতি বছর তার জন্মদিন-মৃত্যুদিনে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে যেতে হয় আমাদের, এবং এটা আমরা দেবও।

যে মানুষটির জন্য বিশ্বসন্ত্রাসী হিটলার বিশ্বকে জয় করে সমগ্র মানব জাতিকে দাস বানাতে পারেনি, যে চার্চিল, রুজভেল্টরা হিটলারকে বাগে আনতে না পেরে বাধ্য হয়ে স্তালিনের শরণাপন্ন হয়, সেই তারাই যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে চলেছে স্তালিনের কুৎসা রটানোর জন্য। তাঁকে ‘খুনি’ প্রমাণের জন্য! কমিউনিজমের প্রতি, কমিউনিস্টদের অস্তিত্বের প্রতি এতটাই ঘৃণা তাদের!

📌

আজকে CIA কে স্বীকার করতে হয়েছে যে ‘স্তালিনবিরোধী প্রচার ছিল অপপ্রচার এবং মিথ্যা।’ ইতালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ঐতিহাসিক মাইকেল প্যারেন্টি সোভিয়েত আর্কাইভ এবং সি আই এ–র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে সোভিয়েত লেবার ক্যাম্প (শ্রম শিবির) কোনওভাবেই নাৎসিদের মতো ডেথ ক্যাম্প ছিল না। কোনও গণনিধন ব্যবস্থা, গ্যাস চেম্বার ইত্যাদি যা নাৎসিরা গোটা ইউরোপে তৈরি করেছিল, এখানে সেরকম কোনও ব্যাপারই ছিল না। গুলাগের অধিকাংশ বাসিন্দাই তাদের মেয়াদ শেষের পর সশরীরে ছাড়া পেয়েছে, অথবা ক্ষমা প্রদর্শনের কারণে মেয়াদের আগেই মুক্তি পেয়েছে। সিআইএ–র রিপোর্টে আছে প্রতি বছরে এই ক্যাম্পগুলোর ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কয়েদি মুক্তি পেত। বিস্ময়কর হল তাদেরই জানা সত্যের ঠিক বিপরীত কথা তারা তাদের বিশ্বময় নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন প্রচার করে গেছে এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে একটা ‘দানবীয় সমাজ’ হিসাবে প্রচার চালিয়ে গেছে।

📌

সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের গুলাগের মৃত্যুর যে সংখ্যা দেখিয়ে তাকে ‘অনাহারে মৃত্যু’ বা ‘হত্যা’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে তা যে ইচ্ছাকৃত তথ্যবিকৃতি তা মাইকেল প্যারেন্টি দেখিয়েছেন। ১৯৩৪–১৯৫৩ পর্যন্ত এই কুড়ি বছরে যত মৃত্যু গুলাগে হয়েছিল তার অর্ধেকেরও বেশি হয়েছিল ১৯৪১–১৯৪৫ – এই চার বছরে। ১৯৪৪ সালে গুলাগ ক্যাম্পে মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৯২ জন। বাস্তব সত্য হচ্ছে, এই সময়কালে রাশিয়ার সাধারণ মানুষের মৃত্যুর হার ছিল এরও অনেক বেশি। এই সময় গোটা দেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল যুদ্ধে কিংবা অনাহারে। এই সময় গুরুতর অপরাধে অপরাধীদের বাদ দিয়ে ইচ্ছুক কয়েদিদের অধিকাংশকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য।

রুশ সরকার যে জেলখানার পরিবেশ উন্নত করেছিল তার প্রমাণ আছে এই দুই নথিতেই। যুদ্ধের সময় গুলাগের মৃত্যুর হার যেখানে ছিল প্রতি হাজারে ৯২ জন, ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই তা নেমে আসে মাত্র ৩–এ। এরকম অসংখ্য তথ্য সিআইএ তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মিথ্যাচারী কুৎসিত প্রতিষ্ঠানটিকে এনে দিয়েছে দিনের আলোয়৷

একটা ছোট্ট হিসাব:

জানুয়ারি ১৯৪১ সালে সোভিয়েতের লোক সংখ্যা- ১৯,৬৭,১৬,০০০।

জানুয়ারি ১৯৪৬ সালে সোভিয়েতের লোক সংখ্যা- ১৭,০৫,৪৮,০০০।

তার মানে বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছিল ২ কোটি ৬১ লাখ ৬৮ হাজার সোভিয়েত নাগরিক!

এবার ১৯৪৬ সালে যেখানে লোক সংখ্যা- ১৭,০৫,৪৮,০০০। সেখানে ১৯৫১ সালে (যে সময়ে স্তালিনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ হত্যার অভিযোগ) লোক সংখ্যা- ১৮,২৩,২১,০০০। অর্থাৎ এই ৫ বছরে লোক সংখ্যা বেড়েছে- ১,১৭,৭৩,০০০। তাহলে কোটি কোটি কোথা থেকে আসল?

📌

সম্মিলিত এই মিথ্যা প্রচারের চিত্রনাট্য প্রস্তুত হয়েছিল গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের গোড়ার দিকে। ফ্যাসিস্ট হিটলারের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার হাতে৷ সারা ইউরোপে লক্ষ–কোটি মানুষের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার, গণহত্যার, তথা আউসভিৎস, ব্রাভেন বুর্ক, মাথাউসেনের মত অসংখ্য কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যার কথা তখন বিশ্বের মানুষ জেনেছে। চরম ক্ষয়ক্ষতি, অসংখ্য জীবনহানীসহ ধ্বংসস্তূপ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সমাজতান্ত্রিক শক্তিতে গড়ে তুলছে সমস্ত দিক থেকে উন্নত সমৃদ্ধ এক নতুন দেশ। পূর্ব ইউরোপে, চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দেশে সমাজতন্ত্রের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসররা যেকোনও উপায়ে সমাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণের প্রবণতাকে ঠেকাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরের কমিউনিস্ট পার্টি ও সোভিয়েত রাষ্ট্রের নানা স্তরে দালাল জুটিয়ে নেয়। মহান স্ট্যালিনের আকস্মিক মৃত্যু এদের সুযোগ করে দেয় সমস্ত কিছুকে ওলট পালট করে দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে। সেই থেকেই চলে আসছে মিথ্যার গোয়েবলসীয় প্রচার।

📌

স্তালিনের দূরদর্শীতাঃ

১৯২০ সালের জুলাই মাসে To All party Organisations শিরোনামে স্তালিন একটা চিঠিতে বলেন-আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে র্যা ঞ্জেল একদল অভিজ্ঞ এবং মরতে ভয় পায়না এমন জেনারেলদের জড়ো করেছে যাদেরকে কিছুতেই থামানো যায় না। রেঞ্জেলের সৈন্যরা দুর্দান্ত সব অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত, মরিয়া হয়ে লড়াই করে এবং তাদের আত্মসমর্পণ করানো যায় না।

কারিগরিভাবে রেঞ্জেলের বাহিনী আমাদের চেয়ে উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত। পশ্চিমাদের কাছ থেকে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, বিমান, কার্তুজ এবং পোশাকের সাপ্লাই আজও আসছে।

র্যা ঞ্জেলের বিরুদ্ধে লড়াইরত আমাদের বাহিনীর দুর্বলতা এটাই যে প্রথমত: তারা যুদ্ধবন্দী, প্রাক্তন ডেনিকিনাইট। দ্বিতীয়ত: তারা স্বেচ্ছাসেবক বা সংগঠিত কমিউনিস্টদের সহ্য করতে পারে না। হয় দলগতভাবে অথবা এককভাবে নেতৃত্ব দখলে রাখে। এই বাহিনীগুলোকে অবশ্যই প্রাক্তন যুদ্ধবন্দীদের থেকে আলাদা করতে হবে এবং নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক বা সংগঠিত কমিউনিস্টদের একটি বড় দল পাঠাতে হবে যাতে তাদের পরিকল্পনা ভন্ডুল করা যায় এবং তাদের হিংস্রতাকে নির্মূল করা যায়।

যেকোনো মূল্যে ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করে রাশিয়ার কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় ইউক্রেন এবং ককেশাস অঞ্চল সর্বদা সোভিয়েত রাশিয়ার শত্রুদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হবে এবং সোভিয়েত ব্যবস্থার জন্যও হুমকির কারণ হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির প্রত্যেক সদস্যের কাছে এই সার্কুলারের ভিত্তিতে গণ-আন্দোলন তীব্র করার এবং ক্রিমিয়ান ফ্রন্টে কমিউনিস্টদের নিয়মিত বাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দিচ্ছে।

এই চিঠির প্রত্যুত্তরে কমরেড লেনিন কেন্দ্রেীয় কমিটির সেক্রেটারি R.C.P.(B.)কে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন: “আমি এই চিঠিকে ‘অবিসংবাদিত’ মনে করি এবং চিঠিটির তাৎক্ষণিক প্রচারের পক্ষে।”

📌

১৯৪৪ সালে ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের কাছে আবদার করেন- তাতার অধ্যুষিত ক্রিমিয়াকে আলাদা স্টেট করে দিতে হবে কারণ সেখানে ইহুদী রিফিউজিদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘The Lend-Lease supply program, and in exchange for opening a Second Front’।

স্তালিনের মৃত্যুর পরে নিকিতা খ্রুশ্চেভ ক্ষমতায় এসে ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৪ সালে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছে দান করে। যুক্তি ছিল-ইউক্রেনীয় প্রজাতন্ত্রকে ক্রিমিয়াকে দিয়ে দিলে মহান সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। পাশাপাশি ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককেও শক্তিশালী করবে এবং সোভিয়েত ইউক্রেনের সমৃদ্ধিও বৃদ্ধি পাবে।

📌

১৯৯০ সালে ক্রিমিয়ায় একটি রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হয়, যাতে ৯৩% ভোট পড়ে ক্রিমিয়াবাসী আলাদা ইউনিয়ন টেরিটোরি হবে। সে সময় সোভিয়েত ভেঙে যাবে এমন সম্ভবনার মধ্যে ক্রিমিয়া পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দাবী করে। অবশেষে ২১ মে, ১৯৯২ সালে ক্রিমিয়াকে The Ukrainian SSR বা ইউক্রেন সোস্যালিস্ট রিপাবলিকের হাতে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে ক্রিমিয়া ইউক্রেনে ‘এ্যাডাপ্টেড’। কিন্তু ইউক্রেন কখনই ক্রিমিয়ার তাতারদের সাথে সৎ আচরণ করেনি। জোর করে ইউক্রেনীয় ভাষা চালু করেছে। অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করেছে। নারিক হিসাবে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে, কারণ ক্রিমীয় তাতাররা ৯৮% রুশভাষী এবং তাদের কৃষ্টি-কালচারও রুশী।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে ইউক্রেন। তার পর থেকেই ইউক্রেনের উপর পড়ে পশ্চিমা ন্যাটো জোটের লোলুপ দৃষ্টি।

ইউক্রেনের পশ্চিমাংশ ইউরোপীয় অ্যালায়েন্স চায় পূর্বাংশ তথা ক্রিমিয়া। আর ডনবাস, লুগানস্ক চায় রাশিয়ার সাথে অ্যালায়েন্সে থাকতে। এই টানাপোড়েন বেড়ে উঠলে ইউক্রেন ক্রিমিয়ার মহা গুরুত্বপূর্ণ বন্দর রাশিয়ার জন্য নিষিদ্ধ করে দেয় এবং রাশিয়ার নেভীকে কৃষ্ণ সাগরে যাবার জন্য Kerch প্রণালী বন্ধ করে দেয় ইউক্রেন, যেগুলো রাশিয়াকে ব্যবহার করতে দেয়ার অন্যতম শর্ত ছিল। ক্রিমিয়া ইউক্রেনের কাছে Autonomous Republic of Crimea দাবী করলে ইউক্রেন অস্বীকার করে। এর পর বিক্ষোভ এবং যুদ্ধ। ৩৮ বছর পর অবশেষে স্তালিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে Autonomous Republic of Crimea স্টাটাস দিয়ে দখল করে নেয়।

📌

রাশিয়ার বুকে জার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলশেভিক পার্টি গড়ে তোলা, শোষিত শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে সফল করে তুলবার জন্য সংগ্রাম, ট্রটস্কিবাদের বিরুদ্ধে তীব্র আদর্শগত সংগ্রাম, বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখবার সংগ্রাম, কমরেড লেনিনের জীবনাবসানের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখবার সংগ্রাম এবং সর্বোপরি হিংস্র উন্মত্ত ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মানবজাতিকে রক্ষার সংগ্রামে ব্যাপৃত ছিল কমরেড স্তালিনের সমগ্র জীবন। শুধু তাই নয়, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে অটুট রাখতে তিনি পুঁজিবাদী ও ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

কমরেড স্তালিনই সর্বপ্রথম কমরেড লেনিনের শিক্ষা ও তত্ত্বগুলোকে সূত্রবদ্ধ করে সৃষ্টি করেন ‘লেনিনবাদ’। এর সংজ্ঞা নির্ধারিত করে তিনি বলেছিলেন : ‘লেনিনবাদ হলো সাম্রাজ্যবাদ ও শ্রমিক—বিপ্লবের যুগের মার্কসবাদ’। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, লেনিনবাদ হলো সাধারণভাবে শ্রমিক—বিপ্লবের মতবাদ ও রণকৌশল এবং বিশেষভাবে এ হলো শ্রমিকশ্রেণির মতবাদ ও রণকৌশল। মার্কসবাদ—এর তত্ত্বকে বিকশিত করে তুলেছিলেন কমরেড স্তালিন। তিনিই লেনিনবাদের প্রবক্তা। ১৯২৪—এ প্রকাশিত কমরেড স্তালিনের ‘লেনিনবাদের ভিত্তি’ এবং ১৯২৬—এ ‘লেনিনবাদের সমস্যা’ পুস্তক দুটিতে লেনিনবাদের আরও ব্যাপক বিস্তৃত আদর্শগত ব্যাখ্যা রয়েছে।

📌

যোসেফ স্তালিনের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ’ অনেক। কমিউনিজমের চিরশত্রু পুঁজিবাদী বিশ্ব তো বটেই, এমনকি সোস্যাল ডেমোক্রাট, নির্বাচনপন্থী কমিউনিস্ট আর শ্রেণি সচেতন শ্রেণি সংগ্রামী কমিউনিস্টরাও স্তালিনের বিরুদ্ধে এক ফর্দ বিষোদ্গার করতে পারলে স্বস্তি বোধ করেন! তাদের মনে হয় তারা গণতান্ত্রিক শুদ্ধাচারের এক মহান ব্রত পালন করলেন! স্তালিনের বিরুদ্ধে বলতে পারাকে (তা সে প্রমাণ থাকুক বা না থাকুক) কেউ কেউ মনে করেন ইতিহাসের কাঠগড়ায় নৈর্ব্যক্তিক থাকা। তিনি তাঁর এককালের সাথীদেরও নাকি ‘ছাড়েননি’ এমনটাই শোনা যায়! তবে সেই সাথীরা সাত ধোয়া তুলসি পাতা ছিল কিনা সে নিয়ে অবিশ্যি কেউ ভুলেও আলোচনা করেন না।

📌

ক্রুশ্চেভ ভক্ত মেদভেদেভ লিখলেন; “আমার বইতে ৭০০ নিহত মানুষের নাম—ধাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা ছাড়াও মারা পড়েছিলেন লক্ষ লক্ষ পার্টি সদস্য। সাতশো মানুষ বললে ঠিক ব্যাপারটা মজবুতভাবে দাঁড় করানো যায় না, তাই একেবারে লক্ষ লক্ষ! এই লক্ষ লক্ষ ফিগারটিকে চ্যালেঞ্জ করলে ধীরে ধীরে সংখ্যাটি কমতে থাকে। একটি পর্যায়ে এসে মাত্র কয়েক হাজারে দাঁড়ায়!

শিল্প সাহিত্যকে কতটা চোরকুঠুরিতে পাঠিয়েছিলেন তার হদিস মেলে না, তবে শলোকভের ধীরে বহে ডনের অনেক সমালোচনা করেও সেটাকে বাজার থেকে তুলে দেননি, মিকুলিনার ‘এম্যুলেশন অব দি মাসেস’ গ্রন্থটি নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয় সোভিয়েতে, মনে করা হয়েছিল বইটি বাতিল করে দেয়া হবে, অথচ তিনি এই অভিযোগ হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেন, তাঁর মতে পুস্তিকাটি বাজার থেকে তুলে দিয়ে লেখক অথবা পাঠককে শাস্তি দেবার কোনো যুক্তিই নেই, বইটির আচ্ছারকম সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু নিষিদ্ধকরণ কক্ষনো নয়!

📌

রাশিয়ায় স্তালিনের নেতৃত্বে যেসব ‘অত্যাচার’ ঘটেছিল, ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে বিচার করলে তৎকালীন অবস্থায় তাকে একান্তই স্বাভাবিক ও অনিবার্য বলে মনে হবে। উপরন্তু স্তালিনের মহত্ত্ব এখানেই যে, মানব সমাজের কল্যাণের জন্য যে বিপ্লবকে জয়ী করার জন্য আত্মনিয়োগ করেছিলেন তাকে তিনি সুদৃঢ় ও দুর্জয় করে গিয়েছিলেন। বিশ্বের মানুষ আর কিছু না হোক, অন্তত এ কারণেই স্তালিনের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

📌

১৯৩৬ সালে সোভিয়েতের আর্থ—সামাজিক পরিস্থিতিতে এক আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সর্বক্ষেত্রেই উন্নতির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এই ব্যাপক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংবিধান—এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় ১৯২৪ সালে সোভিয়েত প্রণীত সংবিধানকে নতুন রূপ দেওয়া হয়। কমরেড স্তালিনের সভাপতিত্বে মোট ৩১ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল ১৯৩৬ সালে রচনা করেন সোভিয়েতের নতুন সংবিধান। এই সংবিধানে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের তুলনায় আরও অনেক বেশি গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া হলো। এই সংবিধানে ঘোষণা করা হয়েছিল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অজেয়। মনীষী রোঁমা রোলাঁ এই সংবিধানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন : “স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শ এতকাল ছিল মানুষের স্বপ্নের বস্তু মাত্র। এই সংবিধান থেকে তারা প্রাণ পেল।’ চীন থেকে সান ইয়াৎ সেনও অভিনন্দিত করেছিলেন এই সংবিধানকে। ইতিহাসে এই সংবিধান ‘স্তালিন সংবিধান’ নামে পরিচিত হয়ে আছে।

📌

১৯৩৮ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনক্রমে কমরেড স্তালিন রচনা করেন ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির (বলশেভিক) ইতিহাস সংক্ষিপ্ত পাঠ’। ঐ একই বছরে তিনি লেখেন ‘দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’যা মার্কসীয় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের এক অমূল্য দলিল।

২২ জুন, ১৯৪১ হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করল। কমরেড স্তালিন ঘোষণা করলেন : . . . কেবল আমাদের দেশকেই মুক্ত করা নয়, ফ্যাসিস্ট প্রভুত্বে নিপীড়িত জনগণকেও আমরা মুক্ত হতে সাহায্য করব। . . . এ যুদ্ধ সমগ্র মানবজাতির মুক্তি ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হবে।

১৯৪১ সালের বাইশে জুন ভোর রাত্রে যখন রুশিদের ঘুমও ভাঙেনি অতর্কিতে জার্মানদের অপ্রতিহত আক্রমণ! পিছু হটার সময়টুকুও ছিল না! সাধারণ অস্ত্র, অস্ত্রভাণ্ডার, সেতু, সচল রাস্তা, খনিজ তেল, খাদ্য গুদাম, এয়ার ফিল্ড, ট্যাঙ্ক, কামান বিমান বিপুল অংশ করায়ত্ত হলো নাজি বাহিনীর! মাটিতেই ২০০০ প্লেন হারাল স্তালিনের বাহিনী প্রথম দুদিনে!

📌

পৃথিবীর যাবতীয় যুদ্ধেই দেখা যায় ক্ষয়ক্ষতি যতদূর নিজেদের কমিয়ে বলা হয়। যাতে সেনাদের মনোবল না ভাঙে, বাস্তবিকই ত্রিমুখী আক্রমণে নাজিরা সংখ্যাধিক্যে ছিল তিন থেকে পাঁচ গুণ! কামান ও মর্টারে তিনগুণ! আর ট্যাঙ্ক বিমানের বিপুল সংখ্যাধিক্য! তার উপর অতর্কিতে করা আক্রমণের ফলে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিপুল ক্ষয়—ক্ষতির মুখে পড়ে রেড আর্মি। স্তালিন কিন্তু কোনো তথ্য গোপন করলেন না। তিনি খোলাখুলি বলেই দিলেন তাঁরা কী হারিয়েছেন, শত্রু কোথায় কতটা মারাত্মক আঘাত হেনেছে সব। এবং সবার শেষে বললেন; “জয় আমাদের সুনিশ্চিত”।

১ মে, ১৯৪৫ কমরেড স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত লালফৌজ বার্লিনের রাইখ্স্ট্যাগে রক্তপতাকা উড়িয়ে মানবজাতির চরমতম শত্রু ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘোষণা করেছিলেন।

📌

ফ্যাসি—বিরোধী যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল প্রথম স্থানে। এই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন ২ কোটির বেশি সোভিয়েত জনগণ। যুদ্ধের সময় শিশুসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে জার্মানিতে দাস শ্রমিক হিসেবে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন সোভিয়েতে ৫৩ লক্ষ যুদ্ধবন্দির মধ্যে যুদ্ধের শেষে মাত্র ১০ লক্ষকে জীবিত পাওয়া গিয়েছিল। ফ্যাসিস্টদের আক্রমণে চরম ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছিল সোভিয়েতের ছোট—বড় মিলিয়ে ১ হাজারেরও বেশি শহরকে, ৭০ হাজার গ্রামকে, ৩২ হাজার শিল্প সংস্থাকে এবং ৯৮ হাজার যৌথ ও রাষ্ট্রীয় খামারকে। যুদ্ধ যখন চলছে, মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। তখন রুজভেল্ট ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রুজভেল্টের জীবনাবসানের পর ট্রুম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্টে্রর সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। অবশ্য কমরেড স্তালিন তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে সমস্ত যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রমাণ করে দিয়েছিল তার সমাজতান্ত্রিক দৃঢ়তা। শুধু তাই নয়, পূর্ব ইয়োরোপের সদ্য মুক্ত হওয়া দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যেও সোভিয়েত তার সমগ্র শক্তিকে ব্যবহার করেছিল। এইভাবে যুদ্ধের বীভৎসতা কাটিয়ে কমরেড স্তালিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে দুনিয়ার তাবৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছিল।

📌

স্তালিনের মৃত্যু নিয়ে কী ঘটেছিল?

১৯৫৩ সালের ৫ মার্চ মস্কোর কাছে রাষ্ট্রীয় খামার বাড়িতে সোভিয়েত ইউনিয়নের তথা বিশ্ব কমিউনিস্ট পরিবারের নেতা জোসেফ স্তালিন মারা যান। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, ৭৪ বছর বয়সী স্তালিনের মৃত্যুর কারণ ছিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, কিন্তু খুব শিগগিরই তার মৃত্যুর সাথে সোভিয়েত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের জড়িত থাকার গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে, পরবর্তীকালে নবনিযুক্ত শাসক কর্তৃপক্ষ খোলাখুলি ঘোষণা করে, যে ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের ইনটেলিজেন্স দফতরের তৎকালীন চীফ লাভ্রেন্তি বেরিয়ার চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন স্তালিন’, আসলে কী ঘটেছিল?

📌

২৮ ফেব্রুয়ারি স্তালিন তার খামার বাড়িতে বেরিয়া ও নিকিতা ক্রুশ্চভ কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর কয়েকজন সদস্যকে জড়ো করেছিলেন। কী নিয়ে সেখানে কথাবার্তা হয়েছিল জানা না গেলেও, এটুকু জানা গেছে যে-কথাবার্তা চলেছিল ভোর ৪টা পর্যন্ত, তারপরে যে যার গন্তব্যে রওনা দেন আর স্তালিন যান শয্যাকক্ষে, ১ মার্চ দুপুরের পর স্তালিনের প্রহরীরা উদ্বিগ্ন হতে শুরু করে। স্তালিন তার রুম থেকে বেরোননি বা কাউকে ডেকেও পাঠাননি। না ডাকলে কারও স্তালিনের কাছে যাওয়ার নিয়ম ছিল না। রাত ১১টার সময় একজন দেহরক্ষী স্তালিনের কাছে গিয়ে তাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। তখনও তার দেহে প্রাণ ছিল কিন্তু বাকশক্তি লোপ পেয়েছিল, সন্ত্রস্ত প্রহরীরা তাকে ডিভানে শুইয়ে বেরিয়াকে ফোন করতে শুরু করল, বেরিয়ার অনুমতি ছাড়া স্তালিনের জন্য ডাক্তারদের কল করা নিষিদ্ধ ছিলো। বেরিয়াকে দীর্ঘক্ষণ ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, যেটা রহস্যময়! অবশেষে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা দফতরের প্রধানকে খুঁজে পাওয়া গেল, তিনি গটগট করে ঢুকলেন সেই ঘরে, যেখানে অচৈতন্য অবস্থায় শায়ীত ছিলেন স্তালিন।

📌

পরে কয়েকজন সাক্ষ্য দিয়েছিল- স্তালিনকে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বেরিয়া ডাক্তারকে কল করতে নিষেধ করেছিলেন। আধাপঙ্গু স্তালিন পড়ে ছিলেন কোনো ডাক্তারি সাহায্য ছাড়া! শুধুমাত্র ২ মার্চ বেরিয়া ডাক্তারদের কল করার নির্দেশ দেন। পলিটব্যুরোর সদস্যরা এসে ভাবলেশহীন, কিন্তু জীবিত স্তালিনের দেহের চারপাশে সমবেত হলেন, ডাক্তাররা তাড়াহুড়ো করতে লাগলেন। বেরিয়া মাঝেমধ্যেই এসে চিকিৎসার কথা না বলে ডাক্তারদের উপর হম্বিতম্বি করছিলেন।

📌

সেদিন বেরিয়া এমন আচরণ করছিলেন, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ‘মালিকের’ মৃত্যুর পর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ব্যাপারে তার আর তর সইছিল না! ঘনঘন মুমূর্ষু স্তালিনের কাছে এসে দীর্ঘক্ষণ ধরে তার মুখের দিকে চেয়ে থাকছিলেন, যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন স্তালিনের শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার…বারবার বলছিলেন-‘কমরেড স্তালিন, আপনি আমাদের কিছু অন্তত বলুন!’ কিন্ত স্তালিনের আর কিছু বলার মতো অবস্থা ছিল না। স্তালিনের কন্যা স্ভেতলানা আলুলায়েভা তার পিতার জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোর স্মরণ করেছিলেন- ‘মৃত্যুর ঠিক পূর্বক্ষণে স্তালিন হঠাৎ চোখ মেললেন, তাকালেন তাকে ঘিরে থাকা মুখগুলোর দিকে, তারপর বাঁ হাতটা তুললেন, উপরের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করলেন, নাকি কোনো সঙ্কেত দিলেন! যাই হোক, তার কয়েক মুহূর্ত পরেই স্তালিন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

📌

প্রতি বছর কমরেড স্তালিনের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকীতে যে কয়েকটি কথা অনিবার্যভাবে লিখতেই হয়, এবারও তার ব্যতীক্রম করছি না। যুদ্ধে তাঁর প্রিয় পুত্র রেড আর্মির লেফটেন্যান্টকে বন্দী করে জার্মানরা। বন্দী বিনিময় করতে চায় তাদের ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পউলাসের সাথে। স্তালিন রাজি হননি! এই শর্ত না মানলে যে কোনো মুহূর্তে প্রাণপ্রিয় পুত্রকে জার্মানিরা হত্যা করবে জেনেও তিনি অবিচলিত! এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় স্তালিনের কাছে দেশ আর নিজের সন্তানের মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ? লাল ফৌজের সর্বাধিনায়ক স্তালিন বললেন; I will not trade a Marshal for a Lieutenant! বলা বাহুল্য স্তালিনের পুত্রকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হয়েছিল।

যারা গড় চিন্তার পাণ্ডিত্যে তাঁর কাঠিণ্য নিয়ে কুৎসা করেন তারা অবশ্য কল্পনাও করতে পারেননি যে দেশের জন্য স্তালিন উৎসর্গ করে দেবেন নিজের ছেলেকেই!

দুনিয়ায় সমাজতন্ত্র ও কমিউনিস্ট সমাজ গঠনের সংগ্রাম যতদিন ধরে চলবে, নিপীড়িত হৃদয়ের প্রতি স্পন্দনে অনুপ্রেরণার স্ফুলিঙ্গ হয়ে রইবেন কমরেড স্তালিন।

………………….

মনজুরুল হক

৫ মার্চ ২০২৪

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান